ঢাকা: অটোমোটেড টেলার মেশিনের (এটিএম বুথ) মাধ্যমে এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলেই আদায় করা হয় অতিরিক্ত চার্জ। একইভাবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে কার্ড দিয়ে কেনাকাটা ও অন্যান্য বিল পরিশোধের সময়ও।
এ বিষয়ে বেশ ক’জন গ্রাহক কার্ডভিত্তিক লেনদেন ও কেনাকাটায় অতিরিক্ত চার্জ আদায় করার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। অভিযোগ তদন্ত করে, কয়েকটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক এটিএম লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত চার্জের তুলনায় অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করছে-এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে।
আরও প্রমাণ মিলেছে পিওএস লেনদেনে গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই কার্ডভিত্তিক লেনদেনের চার্জ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোকে অটোমোটেড টেলার মেশিন ও পয়েন্ট অব সেল লেনদেনে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) নির্ধারিত চার্জ আদায়ের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটিএম বুথের লেনদেন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে আটটি সুইচের মাধ্যমে। এগুলো হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইচ ভিসা, মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেস, দেশিয় নেটওয়ার্ক আইটিসিএল’র কিউক্যাশ, এবি ব্যাংকের ক্যাশ লিংক, ব্র্যাক ব্যাংকের অমনিবাস, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক সুইচ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি)।
এ সুইচে আন্তঃব্যাংক এটিএম বুথে লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার্জ ২০ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহক দেবেন সর্বোচ্চ ১৫ টাকা এবং কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক দেবে ৫ টাকা। কিন্তু এসব সুইচে গ্রাহক কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকের বুথ ব্যবহার করলে প্রতি লেনদেনে ১৪ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চার্জ আদায় করা হচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনে কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে এক ব্যাংকের পিওএস’র মাধ্যমে অন্য ব্যাংকের কার্ড দিলে লেনদেন প্রতি চার্জ নেওয়া হচ্ছে দেড় টাকা থেকে আড়াই টাকা। তবে এনপিএসবি’র আওতায় হলে চার্জ সর্বোচ্চ ৯০ পয়সা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কেনাকাটায় সময় মার্চেন্টরা এই চার্জ বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
কিন্তু এনপিএসবি সুইচে লেনদেনে অধিকাংশ ব্যাংক উৎসাহী নয়। কেননা, প্রতি লেনদেনে তাদের ৫ টাকা দিতে হবে। যা ব্যাংক মুনাফা অনেক কমিয়ে দেবে। তাই গ্রাহকদের গলা কাটতে ব্যাংকগুলো এনপিএসবি’র সঙ্গে যুক্ত না হয়ে অন্যান্য সুইচ ব্যবহারেই বেশি আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি এড়াতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এটিএম কার্ডের ব্যবহার। গর্ভনর ড. আতিউর রহমান কার্ডের লেনদেন বৃদ্ধিতে গ্রামেও কার্ড ভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কার্ড ব্যবহারে যদি অতিরিক্ত চার্জ আদায় করা হয়, তাহলে কার্ড ভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ কমে যাবে। তাই এনপিএসবি নির্ধারিত চার্জের অতিরিক্ত নেওয়ার সুযোগ দেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ জন। সারাদেশে ব্যাংকগুলোর মোট ৬ হাজার ৬৯৪টি এটিএম বুথ এবং ২৯ হাজার ১৮৮টি পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এটি