বিপিও সম্মেলন প্রাঙ্গণ থেকে: ব্যবসা পরিচালনা, উন্নয়ন ও বিনিয়োগের নানা দিক নিয়ে বড় পরিসরে বাংলাদেশের ব্রান্ডিংয়ে শুরু হলো বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলন।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
‘বিপিও সামিট-২০১৫’ নামে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)।
আয়োজকরা জানান, বিপিওকে মূলধারায় নিয়ে আসা, দেশের তরুণদের বেশি করে এই খাতে আগ্রহী করে তোলা এবং দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপিও সেক্টরের অবস্থানকে তুলে ধরার লক্ষে এ আয়োজন।
‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেট ও ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা, গ্রাহকসেবা এবং ব্যবসায়িক স্থাপনার জন্য প্রস্তুতি তুলে ধরা হবে এই সম্মেলনে।
এতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে তুল ধরা হবে। সেমিনারে বিপিও সেক্টরের সাফল্যও ওঠে আসবে।
আয়োজকরা জানান, দেশে বিপিও ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগের বেশি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৩০ মিলিয়ন ডলার। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শুধু বিপিও খাতের কার্যকর প্রতিফলনের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতিতে দারুণ উন্নতি করছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশ এই খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোচ্চ অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে।
ভারত, শ্রীলংকা ও ফিলিপাইন বিপিও সেক্টরে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও সেক্টরে সারা বিশ্বে ৫০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের মধ্যে ভারত ৮০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলংকা ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। বাংলাদেশও দিন দিন এই খাতে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩০ মিলিয়ন ডলারের বিপিও সেক্টর রয়েছে। বিপিও খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভবনা আছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কাজ করার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ এ খাতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় পিছয়ে আছে। দেশে মাত্র ২৫ হাজার লোক এই সেক্টরে যুক্ত আছে।
সম্মেলনে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতনামা ৪০ জনেরও বেশি বক্তা বিভিন্ন সেশনে স্পিকার থাকবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকউন্টস’র সিইও ফায়েজুল চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমেদ, অস্ট্রেলিয়ান বিপিও অ্যাসোসিয়েশন’র সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন এন কনবয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ এইচ কাফী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ইনফোসিস’র এমডি ও সিইও ড. বিশাল সিক্কা, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, মাইক্রোসফটের এমডি এবং টাই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোনিয়া বশির কবির, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ও টেকনোলজি ব্যবসা বিশেষজ্ঞ স্যানটিয়াগো গুটায়ারেজ, ডাটাবেজ মার্কেটিং ও কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজমেন্ট সলিউশন বিশেষজ্ঞ রাজমোহন ভি, বিনোদ হ্যামপাপুর র্যাঙ্গাদোর ও শ্রী দয়া খালসা। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখবেন।
সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনের মধ্যে রয়েছে- স্টার্ট আপস, বাংলাদেশ ইয়ুথ টু ড্রাইভ বিপিও ইন্ডাস্ট্রি, অপরচুনেটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন ব্যাংকিং আউটসোর্সিং, কানেক্টিং দ্য আনট্যাপড স্কিল : পলিটেকটিক, ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনফ্রাসট্রাকচারাল অ্যান্ড অপারেশনাল রেডিনেস, ফিউচার চ্যালেঞ্জেস অব বিপিও ট্রান্সফরমেশন, ইনোভেশন ইকোসিস্টেম-অ্যাক্সিলারেশন অ্যান্ড ইনকিউবিটরস, রোল অব হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউশনস ফর বিপিও ইন্ডাস্ট্রি, এন্টারপ্রেইনারশিপ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, দ্য অপরচুনেটিজ অব আউটসোর্সি ক্লায়েন্ট সার্ভিসেস ফ্রম আইটি পার্সপেক্টিভ, গ্লোবাল বিপিও ইন্ডাস্ট্রি বেস্ট প্রাক্টিসেস, দ্য অপরচুনেটিজ ইন দ্য ডমেস্টিক মার্কেট ফর দ্য বিপিও।
এসব সেশন ছাড়াও সম্মেলনে বিপিও সেক্টরের বহুমাত্রিক সম্ভাবনার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকছে। সম্মেলনে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য থাকছে স্পট ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা। এর মধ্য থেকে ২০০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কল সেন্টারে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।
সম্মেলনের সহযোগী হিসেবে আছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) ও এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)।
আয়োজনে গোল্ড স্পন্সর হিসেবে আছে- এডিএন গ্রুপ, জিনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। সিলভার স্পন্সর- সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, সিসকো সিস্টেমস, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, টেলিটক, এয়ারটেল। আইটি পার্টনার- আমরা কোম্পানিজ ও নেটওয়ার্ক পার্টনার- ফাইবার অ্যাট হোম।
সম্মেলন আয়োজনে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
একে/এমএইচপি/আরএম