ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যমেলা

গলাকাটা মূল্য, দর্শনার্থীদের ভরসা বাসার খাবার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৬
গলাকাটা মূল্য, দর্শনার্থীদের ভরসা বাসার খাবার ছবি: রানা/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা থেকে: নগরীর পল্লবী থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটা করতে এসেছেন রুবিনা আক্তার রুবি। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মাইশা আক্তার চৈত্রি (১০) ও সিফাফ আহসান (৬)।



শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের মাঝখানে মা-ছেলেমেয়ে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। তবে এসব খাবার বাসা থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তারা।

মেলা প্রাঙ্গণের খাবার না খেয়ে বাসা থেকে খাবার আনা প্রসঙ্গে রুবি বাংলানিউজকে বলেন, ন্যাড়া একবার বেল তলায় যায়। ওরা (মেলা প্রাঙ্গণের খাবার হোটেলগুলো) গলাকাটা দাম রাখে। গত বছর সবাই মিলে খাবার খেয়েছিলাম ৬শ ৫০ টাকা বিল হয়েছিলো। সেই থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি, মেলায় হোটেলের খাবার আর খাবো না। গলাকাটা দাম রাখে বলেই বাসা থেকে খাবার নিয়ে মেলায় এসেছি।

শুধু রুবি নন, তার সঙ্গে আরও ১৫ থেকে ২০ জন গোল হয়ে বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার খাচ্ছেন। নুডুলস, রুটি, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে নানা খাবার। গোটা মেলাজুড়েই এমন চিত্র।

মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম শুক্রবার তাই উপচে পড়া ভিড়। এতে যেনো আরও পেয়ে বসেছে খাবারের দোকানগুলো। এদিনও বিপাকে পড়ছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। হোটেলের মেন্যুতে লেখা রয়েছে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে না। এরপরও প্রতিটি খাবারের বিলের সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ ধরা হচ্ছে।

আবার খাবারের সঙ্গে সালাদ দেওয়ার রীতি প্রতিটি হোটেলে থাকলেও এখানে বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। এসব না জেনে খেতে বসে খাবার মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন দর্শনার্থীরা।

বিপাকে পড়াদের মধ্যে একজন বায়িং হাউজে কর্মরত আলামিন হোসেন। পল্লবী থেকে মেলায় এসে হাজী বিরিয়ানি খেয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

আলামিন বাংলানিউজকে বলেন, হাজী বিরিয়ানির সিঙ্গেল একটি প্যাকেটের দাম রাখা হচ্ছে ২শ ৫০ টাকা। বাইরে ওরাই (হাজী বিরিয়ানি) একটি প্যাকেট বিক্রি করে ১শ ২০ টাকায়। এটি এক ধরনের চাঁদাবাজি। এ বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের উচিত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

মেলার ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকে বাম দিকে একটু এগুলেই বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেল চোখে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- হাজী বিরিয়ানি রেস্টুরেন্ট, গ্রীণ ওলিভ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কাবাব হাউজ, হট অ্যান্ড স্পাইসি হাজী বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব, কুটুমবাড়ি, কোকাকোলা আড্ডা ফাস্ট ফুড, আল-রেহমাত-এ কাবাব, বানিসিমো বন্নার কাবাব, হাজী নান্না বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব গ্রীণ হাউজ ও কোকাকোলা ইএফসি।

এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে কাবাব, গ্রিল চিকেন, নান্না বিরিয়ানি, শিক কাবাব, ফুচকা, চটপটি ও পানীয়সহ নানা রকমের খাবার।

সব খাবার হোটেলেই অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে। যেমন, স্টার কাবাব অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজে একটি বিফ শিক কাবাব ১শ ২০ টাকা দাম রাখা হচ্ছে। প্রতিটি হাফ প্লেট চিকেন বিরিয়ানি ১শ ৫০, মাটন কাচ্চি ১শ ৮০, বিফ তেহারি ৯০, চিকেন ফ্রাইড রাইস ১শ ৫০ টাকায় বিক্রি করার কথা। এটি ডিআউটিএফ-২০১৬ এর রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টলের খাবারের মূল্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এদিন দেখা গেলো, অধিকাংশ টেবিলে খাবারের মূল্য তালিকা নেই।

এমনকি ডিআইটিএফ ৩৩টি খাবারের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে মূল্য তালিকা দেওয়া রয়েছে মাত্র ৮টির। বাকি খাবারগুলো গলাকাটা দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বাড়তি দামে খাবার বিক্রি প্রসঙ্গে স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সেলসম্যান মিলন বাংলানিউজকে বলেন, ইপিবি (রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো) তালিকা অনুযায়ী দাম রাখা হচ্ছে। কিছু খাবারের দাম বাড়তি। বোঝেনই তো, মেলায় একটা বাড়তি খরচা আছে না! মেলায় যে খরচা, ৮০ টাকার শিক কাবাব ১শ ৬০ টাকায় বিক্রি করলেও হয় না।

মেলা কর্তৃপক্ষ খাবারের একটি তালিকা মূল্য ঝুলিয়েছে। তাতে দেখা গেছে- চিকেন বিরিয়ানি হাফ ১শ ৫০ টাকা ও ফুল ২শ ৯০ টাকা, বিফ তেহারি হাফ ৯০ টাকা ওফুল ১শ ৪০ টাকা, বিফ কাচ্চি হাফ ১শ ৪০ টাকা ও ফুল ২শ ৭০ টাকা, চিকেন ফ্রাইড রাইস হাফ ১শ ৫০ টাকা ও ফুল ২শ টাকা, গ্রিন সালাদ হাফ ৫০ টাকা ও ফুল ৮০ টাকা, শাহী চটপটি ১শ টাকা, শাহী ফুচকা ১শ টাকা, স্পেশাল দই ফুচকা ১শ ২০ টাকা, বিফ শিক কাবাব ১শ ৩০ টাকা, চিকেন টিক্কা ৩শ টাকা, পরাটা স্পেশাল ৩০ টাকা, পরাটা সাধারণ ১৫ টাকা, হালিম ১শ ১০ টাকা এবং কফি ৪০ টাকা।

কিন্তু এ তালিকা মানা হচ্ছে হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজী বিরিয়ানির দোকানে খাবারের টেবিলে কোনো মূল্যতালিকা নেই।

টেবিলে মূল্যতালিকা কোথায় এমন প্রশ্ন করা হলে, ওয়েটারদের মুখ থেকে ভেসে আসে, খাবারের মূল্য তালিকা টেবিলে নেই! পাশের দেয়ালে টানানো আছে।

খাবারে বাড়তি দাম রাখা প্রসঙ্গে হাজী বিরিয়ানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রুমান সরদার বাংলানিউজকে বলেন, টেবিলে খাবারের মূল্য তালিকা না থাকলেও আমরা কাস্টমারকে বলে দিচ্ছি দামের কথা। শুক্রবার বেইচা কুল করতে পারি নাই, তাই টেবিলে খাবারের মূল্য তালিকা রাখা হয়নি। দাম একটু বাড়তি হবেই। ৩০ দিনের দোকানের জন্য ১৭ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। তারপরও খাবারের প্লেট প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কম দাম রাখছি। যেনো ক্রেতারা খেতে পারেন।

ঘুরে দেখা গেছে, খাবার দোকানের মালিকের কথা ও ক্রেতাদের অভিযোগের মধ্যে অনেক তফাত। কারণ, প্রতিটি খাবারের দাম চড়া মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

কোল্ড ড্রিংকস ও মিনারেল ওয়াটার কোম্পানির দামের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। নান রুটি স্পেশাল ৬০ টাকা, নান রুটি সাধারণ ৩০ টাকা, ডিম অমলেট ২০ টাকা, নুডলস হাফ ৪০ টাকা ও ফুল ৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এভাবেই বাণিজ্য মেলার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ২৫টি খাবারের দোকানগুলোতে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন দর্শনার্থীরা। তবে যেসব দর্শনার্থী বাসা থেকে খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তারাই কেবল মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
এমআইএস/এসএস

** পাটের তৈরি চেয়ার-টেবিল, ঢেউটিন ও হেলমেট!
** টয়োটা ক্যামরি গাড়িতে ১০ লাখ টাকা ছাড়
** লিগ্যাসি ফার্নিচার কিনলেই নিউইয়র্ক, ব্যাংকক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।