ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফসলের মাঠও সামলাচ্ছে নারীরা

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
ফসলের মাঠও সামলাচ্ছে নারীরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: ফসলি জমির বীজতলা তৈরি ওঠানোর কাজকে বলা হয় ‘জালাপাট’। এতো দিন শুধু পুরুষরাই এ কাজ করতো।

আর নারীরা ব্যস্ত থাকতো ঘর-সংসার সামলানোর কাজে। এখন বদলেছে সময়।

ঘর-দুয়ার সামাল দিয়ে প্রতিবন্ধকাতা মাড়িয়ে ফসলের মাঠও সমানতালে সামলাতে হচ্ছে নারীদের। মূলত সংসারের কথা চিন্তা করেই এক সময়কার ঘর কুনোরা মাঠের কৃষি কাজের দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

বাদ যাচ্ছে না সেচ কাজ পরিচর্যা, ধান মাড়ানো কিংবা গোলায় ভরার কাজও। ফলে কৃষক পরিবারে দিন দিন বাড়ছে তাদের গুরুত্ব। গৃহকোণ থেকে বেরিয়ে এসে চাষাবাদের কাজে অংশ নিতে পেরে তাদের মুখায়বে নিশ্চিন্ত আলোর ঝিলিক।

রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ডিগ্রীচর গ্রামের মাঠে মাঠে নারীদের এমন কর্মযজ্ঞের দেখা মেলে। গ্রামের দিকে তাকালেই নজরে আসে সবুজ বীজতলা আর কষ্টে বোনা ফসল।

স্থানীয়রা জানায়, এ গ্রামে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি জমিতে তাদের শ্রমশক্তি ব্যয় করছে। জীবিকার তাগিদে কোনো কোনো পরিবারের পুরুষ সদস্যরা উপজেলার বাইরে আবার কেউ কেউ উপজেলা সদরে অবস্থান করায় ঘরকন্নারা মাঠের কাজে নেমে পড়েছে।

কাজের তালাশে স্থানীয় ডিগ্রীচর গ্রামের লাইলী বেগমের (৩৮) স্বামী গেছেন উপজেলা সদরে। ফলে নিজেদের জমিতে ‘জালাপাট’ তৈরির কাজ করতে হচ্ছে লাইলী ও তার মেয়েকে (২৫)। একই অবস্থা দেখা গেলো রোজিনা ও সনিদের। তাদেরও গড় বয়স ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশের কোটায়। তারা সম্পর্কে ননদ ও জা।

আগে শুধু ঘর-দুয়ার সামলাতেন এখন মাঠও সামলাচ্ছেন জানালেন পঞ্চাশোর্ধ্ব সাবিনা বেগম (৫০)। তার স্বামীও কৃষক। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হচ্ছে- জানতে চাইলে বলেন, ‘স্বামী অন্য কাজে বাইরে গেছে। ’

‘যাবার সময় স্বামী বলছে জালা তোলার কাজ শেষ করতে। নিজের কাজ নিজেদেরই করতো হবে। এ কাজের জন্য শ্রমিক ভাড়া করার সামর্থ্য নেই আমাদের’- যোগ করেন তিনি।

সাবিনার সঙ্গে আলাপের সময় মিটমিট করে হাসছিলেন রোজিনা। বীজতলার গোছা পরিষ্কার করে আঁটি বাঁধছিলেন। তার কথায়-‘দশে মিলে কাজ করছি। লজ্জার তো কিছু নাই। মেয়েদের শুধু গৃহাস্থলির কাজ করলেই চলে না। খেতের কাজও সামলাতে হয়। ’ এবার ৩৩ শতক জমিতে বোরোর আবাদ করছেন বলেও জানান রোজিনা।

আমন ধানের কাঙিক্ষত দাম না পেয়ে হতাশা উচ্চারিত হয় এসব কৃষাণীদের কণ্ঠে। স্থানীয় কৃষাণী সনি (৩৫)বলেন, আমন ধানের মণ প্রতি দাম ছিল ৫’শ টাকা। এ দামে উৎপাদন খরচাও ওঠেনি। কিন্তু বোরো মৌসুমটা হচ্ছে আমাদের পুষিয়ে নেওয়ার সময়। এ মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হয়। আশা রাখি ভালো দামও পাওয়া যাবে।

আগে গ্রাম-গঞ্জে চাতাল মিলে শুধু ধান শুকানো, সেদ্ধ, চাল তৈরি কিংবা মাটি কাটার কাজে দেখা যেতো এখানকার নারীদের। এখন পেটের দায়ে নয়, সংসারের স্বার্থেই মাঠের কাজের ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা।

মাঠের কাজে পুরুষরা একা কুলিয়ে উঠতে পারে না। ফলে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দিয়েই বাড়ি ঘেষা জমিতে জালাপাট (বীজতলা) তৈরির কাজ করতে হচ্ছে সাবিনা, সনি ও রোজিনাদের।

ফসলের মাঠে ব্যস্ত এক নারী বলেন, ‘চাষাবাদের সব শ্রমই আমাদের। শ্রমেই ফসল উৎপাদিত হয়। পুরুষের চেয়ে আমরা কোনো অংশে কম না। নিজেদের কাজ নিজেরাই করার মধ্যে অন্য রকম এক আনন্দ আছে। ’

গল্পের তালে তালে কাজ করে যাচ্ছেন ওই নারী। এটাই বুঝি ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।