ঢাকা: রাজধানী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় এসব পরিবহনের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এতে করে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তে হয় নারীদের। তারা যাতে করে ঝঁকিমুক্তভাবে নগরীতে যাতায়াত করতে পারেন এবং যাত্রী ভোগান্তি না হয় এজন্য মোট ৪শ’টি উন্নতমানের বাস কেনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি)। এর মধ্যে ৩শ’টি ডাবল ডেকার ও ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস ছিল। হঠাৎ করেই অর্থের অভাবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিআরটিসি।
২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাসগুলো কেনার কথা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে বন্ধ হয়ে গেলো ‘বিআরটিসি’র জন্য দ্বিতল এবং আর্টিকুলেটেড বাস সংগ্রহ’ প্রকল্পটি।
ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকার যানজট ও পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিআরটিসি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল। অর্থ সংস্থানের জন্য পিডিপিপি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়। কিন্তু ইআরডি বাস কেনার জন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগী খুঁজে পায়নি। এতে করে আর কেনা হচ্ছে না নগরবাসীর জন্য ৪শ’টি বাস।
বাসগুলো না কেনার কারণ উল্লেখ করে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ৪শ’টি বাস ঋণে কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থ পেলাম না। তাই বাসগুলো আর কেনা সম্ভব হচ্ছে না। পিডিপিপি বাতিল করে এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি।
অথচ বিআরটিসি সব কিছু চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। যেমন এ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করে ৪৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল সরকারি নিজস্ব তহবিল ১১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৩৪৪ কোটি টাকা।
পিডিপিপি’তে ৩শ’টি ডাবল ডেকার ও ১শ’টি আর্টিকুলেটেড বাসের আলাদা ব্যায় হিসাব করা হয়েছিল। ৩শ’টি ডাবল ডেকার বাসের প্রস্তাবিত ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং একশ’টি আর্টিকুলেটেড বাসের ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
বাসগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে বিআরটিসি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে উন্নত ও সমন্বিত ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক সিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষিতে বিআরটিসি বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। বিআরটিসি ২০০৯-১৩ সালের মধ্যে ৯শ’ ৫০টি বাস কেনে যার মধ্যে সিঙ্গেল ডেকার, এসি, নন এসি, ডাবল ডেকার এবং আর্টিকুলেটেড বাস অন্তর্ভুক্ত আছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে বিআরটিসির ৩শ’ ৩৪টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিআরটিসি’র ৪৯টি বাস দেওয়া হয়।
বর্তমানে বিআরটিসি’র ১ হাজার ৬৩টি বাস চলাচল করছে। নতুন কেনা ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস গাজীপুর থেকে গাবতলী, গাজীপুর থেকে মতিঝিল ও বালুঘাট (ক্যান্টনমেন্ট) মতিঝিল রুটে চলাচল করছে।
আর্টিকুলেটেড বাস কম সময়ে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাস স্বল্পতার কারণে বিআরটিসির পক্ষে যাত্রীদের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বিআরটিসির বাস বহরে ৫শ’ ৮৮টি পুরনো বাস রয়েছে, যা ইতোমধ্যেই পরিবেশ দূষণ করছে এবং ঘন ঘন বিকল হওয়ায় যানজট ও জনভোগান্তি বাড়ছে।
বছরখানেক আগে আর্টিকুলেটেড বাসকে বিআরটিসি জনপ্রিয় মনে করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই বাসকে ঝামেলা মনে করছে বিআরটিসি।
আর্টিকুলেটেড বাস কেনা থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে বিআরটিসি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আর্টিকুলেটেড বাস ঝামেলা। তাই এ বাস আর কেনা হবে না। তবে আমরা নতুন করে ৩শ’টি সিঙ্গেল ডেকার ও ৩শ’টি ডাবল ডেকার বাস কেনার কথা ভাবছি। এর মধ্যে এসি ও নন এসি উভয় থাকবে। তবে তার আগে আমাদের অর্থের সংস্থান করতে হবে। কারণ, সমস্ত বাসগুলো আমরা ঋণে কিনবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এমআইএস/আইএ/এএসআর