ঢাকা: দেশের দুই মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেল একীভূতকরণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একীভূতকরণের পর দুই কোম্পানি রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে।
আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ (আজিয়াটা) এবং ভারতীয় এয়ারটেল লিমিটেড (ভারতী) বাংলাদেশে রবি আজিয়াটা লিমিটেড (রবি) এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের (এয়ারটেল) কার্যক্রম একীভূতকরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এ চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রবি-এয়ারটেলের এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ চুক্তির কার্যকারিতা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি), সরকার এবং আদালতের অনুমোদন পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করে এ প্রক্রিয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুই মোবাইল অপারেটরের বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার সম্ভাবনার বিষয়ে কোম্পানি দু’টির একান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর এ চুক্তি সম্পন্ন হলো।
চুক্তি সম্পাদনের ফলে শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস হবে। এতে আজিয়াটা ৬৮.৭ শতাংশ ও ভারতী ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। বাকি ৬.৩ শতাংশ বর্তমানের অপর শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছে থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই কোম্পানির একীভূত শক্তি সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দেবে। একীভূত সত্তায় চার কোটি গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরে পরিণত হবে রবি। যার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে সুষম ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
রবি এবং এয়ারটেলের যৌথ সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্কের অধিকারী হবে এই একীভূত সত্তা। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টেলিযোগাযোগ এবং উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে এবং তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ব্যবসা একীভূত করার জন্য গত বছরের ৯ সেপ্টম্বর আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে রবি-এয়ারটেল। এরপর বিটিআরসিকে চিঠি দেয় দুই অপারেটর। একীভূত হওয়ার পর এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তিন বছর পর ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে চলেছে এবং অতি অল্প সময়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় মোবাইল সেবা পৌঁছে গেছে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এ শিল্প খাতে বিদ্যমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুরীকরণে সহায়ক হবে এবং বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সুনিশ্চিত করবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, এর ফলে আরও মানসম্পন্ন এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নিয়ে গ্রাহকদের কাছে অধিকতর সুবিধা এবং উন্নততর ডাটা ও অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেবে রবি।
একীভূতকরণের মাধ্যমে চার কোটি গ্রাহকের জন্যে তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাভারেজ এবং উন্নততর মোবাইল ইন্টারনেট সেবার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হবে। সবচেয়ে বিস্তৃত বিক্রয় ও বিপণন চ্যানেলের মাধ্যমে এবং দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের সহযোগিতায় বিক্রি ও বিপণন সেবা আরো বিস্তৃত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে।
চার কোটি গ্রাহকের বিশাল সংখ্যার শক্তির ওপর ভর করে গ্রাহককে নিজ নেটওয়ার্কে (অন-নেট) কম মূল্যে কল করার সুযোগ প্রদান করা যাবে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে ইন্টারনেট সংযোগের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুই কোম্পানির কার্যক্রম একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের ফলে আরো সুলভে মোবাইল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
এ একীভূতকরণ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করবে।
প্রস্তাবিত একীভূতকরণ বাংলাদেশ টেলিকম শিল্পখাত এবং এর বাজার কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড সারা দেশে আরো দ্রুতগতিতে পৌঁছে দেওয়াও নিশ্চিত করবে। দেশের সার্বিক অথর্নীতি এবং জাতীয় রাজস্বে এ একীভূতকরণ উল্লেযোগ্য অবদান রাখবে।
উন্নততর মোবাইল ডাটা ও ব্রডব্যান্ড সেবা অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি করবে, স্থানীয় মোবাইল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সহযোগী সেবার মান বাড়াবে এবং অন্যান্য খাতেও নতুন নতুন সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করবে।
একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যবসা কাঠামো উন্নততর হলে ব্যবসায়িক লাভ এবং শেয়ার হোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত হবে।
রবি এবং এয়ারটেলের প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনবে। এর ফলে একদিকে শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে যা সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিস্তৃত করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে তাদের সক্ষমতা বাড়াবে। অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা আরো সহজলভ্য হবে।
রবির প্রধান নির্বাহী সুপুন বীরাসিংহে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিযোগীবহুল টেলিকমিউনিকেশন খাতে একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা মনে করি, এ একীভূতকরণের মাধ্যমে আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল উভয়েই বর্ধিত আকার এবং দক্ষতার ফলশ্রুতিতে ব্যয় সংকোচনের সুবিধা পাবে।
পাশাপাশি কর্মকৌশলের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের আরো সাশ্রয়ী সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে যেকোনো বিনিয়োগে এ খাতের দুই শীর্ষস্থানীয় অপারেটর তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে, যা এ শিল্পের সার্বিক কল্যাণ সাধন করবে। জাতীয় অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
‘সামনের দিনগুলোতে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মুল্যে সবচেয়ে সেরা মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড অফার দেওয়ার লক্ষ্যে রবি এবং এয়ারটেলের সমন্বিত শক্তিকে কাজে লাগানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ একীভূতকরণ গ্রাহকদের জন্যে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করবে এবং তাদের জন্যে সবচেয়ে লাভজনক প্রস্তাবনা দেওয়া সম্ভব হবে’।
আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট এবং গ্রুপের প্রধান নির্বাহী দাতোশ্রী জামালুদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, আজিয়াটার একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণ কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন দেশে আমরা নিজেদের অবস্থান জোরদার এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ ধরনের একীভূতকরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি।
‘ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং কম্বোডিয়ার মতো বাজারে এ ধরনের একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণে আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের বাজারেও একীভূতকরণে আজিয়াটার নেতৃত্ব দানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে’।
বাংলাদেশে আজিয়াটার দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে জামালুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র। আজিয়াটা ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিনিয়োগ করে। এ অঞ্চলের অন্য সব বিনিয়োগ ক্ষেত্রের মতো আজিয়াটা বাংলাদেশেরও দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধুমাত্র টেলিযোগাযোগ খাতেই নয় বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনগণ এবং প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে আমাদের অবদানের বিষয়েও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
ভারতী এয়াটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও (ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া) গোপাল ভিত্তাল বলেছেন, দু’টি কোম্পানির শক্তিকে একত্রিত করার পেছনে অত্যন্ত যৌক্তিক কারণ রয়েছে। একীভূত এ সত্তা তার কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বমানের আরও ভালো সেবা দিতে সক্ষম হবে এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬/আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা
এমআইএইচ/টিআই/এএসআর