ঢাকা: সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করলেও গ্রহণের দিক থেকে একেবারেই নিচের সারিতে অবস্থান করছে। মাথাপিছু চাহিদা অনুযায়ী সবজি গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন একজন সুস্থ সবল মানুষের ২২০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু দেশে মাথাপিছু সবজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে মাত্র ৭০ ভাগ।
সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর সবজির অপচয় রোধ, চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিজেদের সবজি খাওয়ার অভ্যাস না পাল্টালে সবজি গ্রহণের দিক দিয়ে পিছিয়েই থাকতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সবজি বিভাগের প্রধান ড. গোলাম মোর্শেদ আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, সবজি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই নীচের সারিতে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবজি গ্রহণের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বে সবজি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এটি অনেক বড় অর্জন। এছাড়া প্রতিবছরই বাড়ছে সবজি উৎপাদন ও চাষের পরিমাণ।
সবজির অপচয় রোধ খুবই জরুরি উল্লেখ করে এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ সবজি বিভিন্নভাবে অপচয় হয়ে থাকে। এছাড়া সবজির ব্যবহারও খুব সীমিত। ফলে সবজি গ্রহণে আমরা একেবারেই পিছিয়ে আছি।
সবজি উৎপাদনের সফলতাকে বড় পাওয়া হিসেবে মেনে নিয়ে থেমে থাকলে চলবে না বলে মনে করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌশলতত্ত্ব ও উদ্ভিদ বিভাগের প্রফেসর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, অনেক বেশি সবজি উৎপাদন করলাম, কিন্তু তা খেতে পারলাম না। তাহলে এই সফলতা দিয়ে কী হবে! তাই আমাদের মাঝে সবজি গ্রহণের উপকারিতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি জানান, দেশের মোট জমির শতকরা নয় দশমিক ৩৮ ভাগ জমি সবজি চাষে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। যা চাহিদা অনুযায়ী খুবই সীমিত। তাই চাষাবাদের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্র জানায়, শীত ও গ্রীষ্ম কালীন এই দুই মৌসুমে দেশে সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দুই মৌসুমে সাত লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সাত লাখ ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৪২ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়েছে।
আর চলতি অর্থ বছর ২০১৫-১৬’তে আট লাখ পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশে প্রায় দেড়শ রকমের সবজি চাষ হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সমভূমি জমি, বাড়ির আঙ্গিনা, বাড়ির ছাদে, পানিতে, মাচায়, ঘরের চালে, চর ভূমিতে, উপকূলীয় অঞ্চলে, ভাসমান ও হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষের মাধ্যমে এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে।
অবশ্য এসব জায়গায় সবজি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, যা মাঠে এখন চলমান বলে জানায় ডিএই’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কৃষিবিদরা মনে করেন, সুস্থ সবল বীজ আর যত্নে দেশের সব ধরনের মাটিতেই নানা রকম সবজি ফলানো সম্ভব হয়। গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের সবজি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে সবজির চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি গবেষক ও বিজ্ঞানী ড. জি এম হালিম বলেন, আমরা শুধুমাত্র মাছ, মাংসসহ আমিষ জাতীয় খাবারের দিকে ঝুঁকে থাকি। সবজিও যে শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা অনেকেই আমলে নেই না। কিন্তু প্রায় সব ধরনের ভিটামিনের উপস্থিতি রয়েছে সবজিতে।
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সবজি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সবজি ভিটামিন ও খনিজ লবণের সরবরাহ করে থাকে। পরিমাণে কম দরকার হলেও শরীরের নানা রকম জৈবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, শরীর ও বুদ্ধির বিকাশেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সবজি। রঙিন শাক সবজিতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
একে/এসএইচ