ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হলুদের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
হলুদের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ছবি: মানজারুল ইসলাম/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: রান্নাঘরে হলুদ, বিয়ে বাড়িতেও হলুদ। হলুদ মিশে আছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও সাজগোজের সংস্কৃতিতে।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও হলুদ চাষ লাভজনক। এ কারণে খুলনার অনেক চাষি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষ করে সফল হচ্ছেন। বিশেষত পতিত জমিতে হলুদ চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন অনেকে।

চলতি মৌসুমে খুলনায় হলুদের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদিত হলুদের ফলন হয়েছে বেশ। মাঠে কৃষকরা হলুদ ওঠাতে ব্যস্ত এখন। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা কাঁচাহলুদ কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছেন। এছাড়াও বাইরের জেলাগুলোয় হচ্ছে হলুদ সরবরাহ।

ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার হলুদ চাষি আব্দুস সত্তার বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার কাটাখাল, মালতিয়া, চাকুন্দিয়া, কাঁঠালতলা, ফুলবাড়িয়ায় ব্যাপকহারে হলুদ চাষ হয়েছে। এ বছর হলুদের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

হলুদ ক্ষেতের ভেতর মরিচেরও চাষ করেছেন আব্দুস সাত্তার। এ কারণে মুনাফা একটু বেশি পেয়েছেন।

কাঁঠালতলা এলাকার চাষি রুস্তম আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৫০-৫৫ মণ হলুদ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি মণ কাঁচাহলুদ বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা পর্যন্ত। হলুদ চাষে জৈব সার ব্যবহারে খরচ হয় কম। বিঘাপ্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় ৮/১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির কাঁচাহলুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪৫ হাজার টাকায়।

রূপসা উপজেলার আইচগাতী এলাকার হলুদ চাষি রফিক জানান, অনেক বছর ধরে হলুদ চাষ করছেন তিনি। আগে চাষ করতেন নিজ পরিবারের সারা বছরের চাহিদা মেটাতে। এখন তিনি হলুদ আবাদ করছেন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। এ বছর তিনি পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। এর মধ্যে অনেক পতিত জমিও ছিলো।

তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই হলুদ চাষে এগিয়ে এসেছেন বলে জানান রফিক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় এবার বাণিজ্যিকভাবে প্রায় তিনশ’ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো।

তিনি জানান, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। হলুদ চাষে যেমন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে তেমনি জাতীয় চাহিদা পূরণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ জানান, হলুদের রয়েছে নানা গুণ। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে হলুদের কোনো জুড়ি নেই। খালি পেটে কাঁচা হলুদের রস খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। দুরারোগ্য ক্যানসার রোগ সারাতে হলুদ মশলাসমৃদ্ধ তরকারির ঝোল পথ্য হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষিবিদদের মতে হলুদ চাষের পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
জাত: ডিমলা ও সিন্দুরী নামে বাংলাদেশে দু’টি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় তিনগুণ ফলন বেশি দেয়।

উপযোগী জমি ও মাটি: সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অতি উত্তম।

বীজ: সাধারণত: হলুদ চাষের জন্য একর প্রতি প্রায় ৮১০ থেকে ১২১৫ কেজি বীজের (মোথা) প্রয়োজন হয়। তবে ছড়া বীজ ব্যবহার করলে একর প্রতি ৬০০-৮০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ গ্রাম ওজনের মোথা বীজ হিসেবে রোপণ করা দরকার।

জমি তৈরি: ভালো ফলনের জন্য গভীরভাবে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে এবং আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।

বপন ও রোপন পদ্ধতি: হলুদ খরিপ মৌসুমে রোপণ করা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা ভাল। তবে মে মাসেও রোপণ করা যায়। সাধারনত সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ ইঞ্চি এবং কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি। কন্দের গভীরতা ২-৩ ইঞ্চি।

সার ব্যবস্থাপনা: জমির উর্বরতার ওপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি হেক্টরে সারের পরিমাণ হলো, গোবর ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া ভেলি হালকাভাবে কুপিয়ে প্রয়োগ করে আবার ভেলি করে দিতে হয়।

১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং আরও  ৫০-৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির উপরি সার হিসেবে প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য মাটি ভেলিতে দিতে হবে।

ফলন: উপযুক্ত যত্ন নিলে হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টন কাঁচা হলুদ পাওয়া যায়।

হলুদ সংগ্রহ: রোপণের প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস পর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে গাছের পাতা শুকিয়ে যায়। তখন পাতা কেটে তার ১০ থেকে ১২ দিন পর হলুদ সংগ্রহ করতে হয়।

হলুদ সংরক্ষণ:  হলুদের গায়ের মাটি এবং শিকড় পরিষ্কার করার পর হলুদ কোনো ধাতব বা মাটির তৈরি পানিভর্তি পাত্রে ধীরে ধীরে জাল দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সিদ্ধ করতে হয়। হলুদের শুকনো পাতা জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়। হলুদ সিদ্ধ করে ১২-১৩ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে ঘরে সংরক্ষণ করা যায় হলুদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।