ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নেপালে মিলছেন সার্ক যোগাযোগমন্ত্রীরা

আঞ্চলিক রেল-মোটরযান যোগাযোগে চূড়ান্ত চুক্তি হচ্ছে

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
আঞ্চলিক রেল-মোটরযান যোগাযোগে চূড়ান্ত চুক্তি হচ্ছে

ঢাকা: আবারও আলোচনায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল ব্যবস্থা এবং রেলওয়ে বিষয়ক সার্ক আঞ্চলিক চুক্তি।

চলতি মাসের ১৬ তারিখে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সার্কের যোগাযোগমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।

সার্কের যোগাযোগমন্ত্রীরা এ বৈঠকেই চূড়ান্ত করতে চান এ দু’টি চুক্তির খসড়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

জানা গেছে, কোনো বাধা ছাড়াই সার্কভুক্ত দেশগুলোতে চলাচল করবে পণ্য ও যাত্রী। এমনকি কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও পাড়ি দিতে পারবেন সার্ক অঞ্চল। একইভাবে রেলপথেও সার্ক অঞ্চলের যেকোনো দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এভাবেই স্বপ্ন দেখা হয়েছিলো অভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোকে যুক্ত করার।

১৮তম সার্কের শীর্ষ সম্মেলনে এ নিয়ে দরকষাকষি চললেও শেষ পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি সার্ক নেতারা। তবে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো আগামী সার্কের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আগ পর্যন্ত। সেসময় এ চুক্তি নিয়ে মতানৈক্য থাকায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল ব্যবস্থা চুক্তি করে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আঞ্চলিক ট্রানজিটে যুক্ত হতে এরই মধ্যে দু’টি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। নেপালের কাঠমান্ডুতে ১৮তম সার্ক সম্মেলনে সড়ক ও রেল ট্রানজিট সংক্রান্ত পৃথক চুক্তি দু’টি সই হওয়ার কথা ছিলো। তবে পাকিস্তানের বিরোধীতায় চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি সার্ক। ফলে এবারের বৈঠকে আগেরবারের চুড়ান্ত করা খসড়ার উপরই আলোচনা হবে। চুক্তির বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত থাকলে সেখানেই উত্থাপন করে তা নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

এবারের যোগাযোগমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক থেকেই চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে চায় সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলো। সার্কের বাণিজ্য ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই এ চুক্তি দু’টি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, তৈরি করা খসড়া ‘সার্ক রিজিওনাল মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট ফর সার্ক মেম্বারস স্টেটস’ শীর্ষক চুক্তির আওতায় অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা হবে। এক্ষেত্রে পণ্যবাহী (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেইলার) ও যাত্রীবাহী মোটরযান (ভাড়া ও নিজস্ব), এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িও এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে। আবার পণ্য খালাস ও উঠানো যাবে। তবে গাড়ি প্রবেশের সময় প্রতিটি দেশের নির্ধারিত কাস্টম শুল্ক দিতে হবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে গাড়ি চালানোর জন্য গাড়িচালকের বিশেষ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে, যা সার্ক সচিবালয় বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করবে। এছাড়া দুর্ঘটনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গাড়ির আঞ্চলিক বিমার শর্ত রাখা হয়েছে। যেকোনো দেশেই এ বিমা করা যাবে।

এছাড়া বাংলাদশে গাড়ি প্রবেশ ও প্রস্থানের সম্ভাব্য রুটগুলোর বিষয়টিও এ চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কলকাতা থেকে পেট্রাপোল, বেনাপোল, ঢাকা হয়ে আখাউড়া দিয়ে আগরতলা। দ্বিতীয় রুট হিসেবে রয়েছে- আগরতলা, আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। তৃতীয় রুটটি ভারতের শিলচর থেকে সিলেটের সুতারকান্দি, পাটুরিয়া ফেরি পার হয়ে বেনাপোল দিয়ে কলকাতা। এই রুটগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত হবে। আর পাকিস্তান থেকে ভারতের কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসা যাবে।

ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ রুট হবে দু’টি। প্রথমটি, ভুটানের সামড্রুপ জংখা থেকে ভারতের গোয়াহাটি, শিলং, সিলেটের তামাবিল হয়ে চট্টগ্রাম এবং দ্বিতীয়টি, থিম্পু থেকে ফুয়েন্টশোলিং, ভারতের জাইগাও হয়ে বুড়িমারি স্থলবন্দর দিয়ে চট্টগ্রাম বা মংলাবন্দর যাবে। আর কাঠমুন্ডু থেকে কাকারভিটা হয়ে ফুলবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চট্টগ্রাম বা মংলাবন্দর পথে যুক্ত হবে নেপাল।

এদিকে, রেল ট্রানজিটের চুক্তিটি সার্ক রিজিওনাল রেলওয়েজ এগ্রিমেন্ট ফর সার্ক মেম্বারস স্টেটস নামে পরিচিত হবে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে- মংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চিলাহাটি, ভারতের হলদিবাড়ি ও হাসিমারা হয়ে ভুটান পর্যন্ত যাবে বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান রেল রুট।

নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ তিনটি রুট হবে। নেপালের বীরগঞ্জ থেকে ভারতের রাকসাও, সিংরাবাদ হয়ে বাংলাদেশের রহনপুর দিয়ে মংলা চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত একটি; নেপালের বিরাটনগর থেকে ভারতের জগবাড়ি, দিঘাপুর হয়ে বিরল, খুলনা, মংলা বন্দর পর্যন্ত দ্বিতীয় রেলপথ এবং নেপালের বারদিবাজ, কিনারওয়া হয়ে ভারতের জয়নগর, রাধিকাপুর দিয়ে বাংলাদেশের বিরল, খুলনা, মংলা বন্দরে তৃতীয় রেলপথ পৌঁছাবে।

ভারত-বাংলাদেশ রুট হবে আগরতলা থেকে আখাউড়া, গঙ্গাসাগর হয়ে চট্টগাম বন্দর পর্যন্ত। আর পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশ দু’টি রুটের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি লাহোর থেকে ভারতের দিল্লী, কলকাতা, পেট্রাপোল, দর্শনা, বেনাপোল হয়ে ঢাকা এবং অন্যটি পাকিস্তানের লাহোর থেকে ভারতের দিল্লী, কলকাতা, পেট্রাপোল হয়ে দর্শনা, বেনা, ঢাকা, আখাউড়া, গঙ্গাসাগরে যাবে।

উভয় চুক্তির ক্ষেত্রেই কোনো দেশ ইচ্ছা করলে ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে পারবে। এছাড়া পাঁচ বছর পর চুক্তি রিভিউ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
জেপি/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।