ঢাকা: ভোক্তাদের কাছ থেকে মূসক নেওয়া হয় তবে তা রাজস্ব খাতের জন্য নয়, পকেটস্থ করতে। ইসিআর মেশিন আছে, ব্যবহার হয় কালেভাদ্রে, তাতেও হয় টেম্পরারিং।
এভাবেই নিত্য-নতুন কৌশলে কোটি কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিচ্ছে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার আলোক ঝলমলে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট।
শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অভিযানে মূসক ফাঁকির এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যদিও খিলগাঁওকে ‘মূসক মডেল’ করতে চায় এনবিআর।
শর্মা কিং, আল ফ্রাঁন্সিসকো, ক্যাফে কমিক্স, ভূতের আড্ডা, বজরা, মিউজিক অ্যান্ড ব্রাইট, ক্যাফে অ্যাপিলিয়ন ও ক্যাফে থিয়েটারের মতো রেস্টুরেন্ট রয়েছে ফাঁকির তালিকায়।
অধিদফতরের চারটি টিম এসব অভিযান পরিচালনা করে। উদ্দেশ্য খিলগাঁও এলাকায় রেস্টুরেন্ট সমূহকে মূসক আইন মানতে বাধ্য করে মডেল মূসক এলাকা ঘোষণা করা।
মূসক গোয়েন্দার একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
সূত্র জানায়, খিলগাঁও এলাকার শর্মা কিং, ক্যাফে কমিক্সসহ সব রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে ইসিআর চালান ইস্যু না করাসহ মূসক ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অসংখ্য ভোক্তা মূসক গোয়েন্দার ফেসবুক পেজে https://www.facebook.com/vatintelligencebd/ ইসিআর চালান ও প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক চালানসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছেন।
অভিযোগের সূত্র ধরেই চলে অভিযান। অভিযানে কর্মকর্তারা দেখতে পান, ইসিআর আছে তবে চালান ইস্যু হয় না। পস (পয়েন্ট অব সেলস মেশিন) সফটওয়্যারেও আছে সমস্যা।
মূসক চালান দেয় না, দেয় নিজস্ব বাণিজ্যিক চালান। গড়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিমাসে মূসক ১ থেকে ৩ লাখ টাকা প্রযোজ্য হলেও দেয় মাত্র ৫-১০ হাজার টাকা।
বিক্রয়ের ওপর গড়ে ১০ শতাংশ মূসকও দেয় না প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও পণ্য বিক্রয়সহ প্রতিটি রেস্টুরেন্টের প্রতিমাসে খরচ আছে প্রায় ১০ লাখ টাকার উপরে।
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সুলতান মাহমুদ টুকু বাংলানিউজকে বলেন, খিলগাঁও এলাকার বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট মূসক দেয় না।
তিনি বলেন, আজকে (শনিবার) ১০-১২টি রেস্টুরেন্টে অভিযান হয়েছে। সবগুলোতে কম বেশি মূসক ফাঁকির নয়া নয়া কৌশল পাওয়া গেছে। একটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানোর খবর পেয়ে শর্মা কিং ও ক্যাফে কমিক্স কম্পিউটার ও ইসিআর চালান সরিয়ে ফেলে। পরে তা খুঁজে পাওয়া যায়।
সুলতান মাহমুদ টুকু আরও বলেন, প্রতিটি রেস্টুরেন্টে মূসক নিলেও চালান না দেওয়া, প্রকৃত বিক্রয় গোপন, ক্যাশ রেজিস্টার লুকিয়ে ফেলাসহ মূসক ফাঁকির নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিটি রেস্টুরেন্টের বাণিজ্যিক দলিল, সিপিও, মূসক চালান, ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্টার, ভাড়ার চুক্তিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। এসব পর্যালোচনা করে প্রতিটি রেস্টুরেন্টের মূসক ফাঁকির চিত্র প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সুলতান মাহমুদ টুকু বলেন, হয়রানি নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সবার মধ্যে মূসক সচেতনতা তৈরি করা। মূসক তো বিক্রেতার পকেট থেকে নয়, ক্রেতার কাছ সংগ্রহ করে দেবেন। ঢাকার মধ্যে খিলগাঁও এলাকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এনবিআরের দৃষ্টিতে (মূসক আইন মানতে বাধ্য করা) মডেল মূসক এলাকা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। সেজন্য অভিযান চলছে, চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
আরইউ/এমজেএফ