ঢাকা: ১৫ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পনগরী নির্মাণের কাজ। বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখেনি এটি।
১৫ বছর আগে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) প্রস্তাব পাঠালেও এটি এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছে।
বার বার বিসিক ও পরিকল্পনা কমিশনে ঘুরপাক খাচ্ছে পরিকল্পনাটি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকল্পের খোঁজখবরও রাখছে না বাইশিমাস।
বাইশিমাস’র সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ছয় মাস হয়ে গেলো শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আর কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। ১৫ বছর আগে বিসিক’র কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হবে হবে করে ১৫ বছর পার হয়েছে। আমাদের দাবি আহামরি কিছু নয়। অল্প কিছু জমি দিলেই আমরা ইলেক্ট্রিক্যাল গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। এরপরও বিসিক এটি করে দিচ্ছে না।
প্রায় প্রতিবছর ইলেক্ট্রিক্যাল গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পনগরী প্রকল্পের প্রস্তাব বিসিক-এ পাঠায় বাইশিমাস। বিসিক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। এর মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২শ ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য, একটি সম্ভাবনাময় ও পরিবেশবান্ধব স্থানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি এবং হালকা প্রকৌশল শিল্প স্থাপন। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান বাড়ানো। শিল্পনগরীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে ১০ হাজার ৬শ ৫০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এরপরও ঝুলে রয়েছে শিল্পনগরী।
শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতি বছরই বাইশিমাস বিসিককে চিঠি দিয়ে অবগত করেছে। এরপরও উদাসীন বিসিক।
বাইশিমাস’র সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতিবছরই আমরা এ বিষয়ে বিসিককে চিঠি দিয়ে থাকি। এরপরও কোনো কাজ হচ্ছে না। কবে শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হবে বিসিক বলতে পারে না।
বিসিক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি ২০১৪ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার তিনটি স্থান পরিদর্শন করে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। কমিটি মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরত্বে এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বেতকা মৌজায় ৫০ একর আয়তনবিশিষ্ট জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এছাড়া প্রকল্পের উপর ২০১৫ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ে যাচাই কমিটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশগুলো প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করে প্রকল্প তৈরি করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় নয় লাখ ২৯ হাজার ৩শ ৫১ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩শ ৭৫ মিটার প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৯৩ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ ও একটি গভীর নলকূপ নির্মাণ করার কথা।
এখনও ৩শ ৫৭টি শিল্প স্থাপনের জন্য প্লট নির্মাণও হয়নি। এর মধ্যে এ টাইপ (ছয় হাজার বর্গফুট) ১শ ১২টি, বি টাইপ (সাড়ে চার হাজার বর্গফুট) ৭৬টি, সি টাইপ (তিন হাজার বর্গফুট) ১শ ১২টি ও এস টাইপ (২৪শ থেকে সাত হাজার বর্গফুট) ৫৭টি।
নানা গুরুত্ব থাকলেও প্রকল্পটি এখনও ঝুলে রয়েছে। যেমন, প্রকল্পটি সমাপ্তির পর প্রায় শিল্প ইউনিটে ১০ হাজার ৬শ ৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইউনিটগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশ মহিলা শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষিত করার কথা।
শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা না হওয়া প্রসঙ্গে বিসিক’র পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রমা রানী রায় বাংলানিউজকে বলেন, ইলেক্ট্রিক্যাল গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কয়েকটি সভা করেছি। সবাই যদি চান তবে শিল্পনগরী হবে। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বেতকা মৌজায় ৫০ একর আয়তনবিশিষ্ট জায়গায়ও নির্বাচন করেছি।
শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা ১৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কতো বছর ঝুলে রয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কারণ, সবে আমি বিসিক’র দায়িত্ব পালন করছি। তবে আশা করছি, শিল্পনগরী হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
এমআইএস/এসএস