ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই জালিয়াতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
সিটি ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই জালিয়াতি

ঢাকা: বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের হোতা সন্দেহে রাজধানীর গুলশান থেকে আটক পোল্যান্ডের নাগরিক পিতর সেজেপান মাজুরেক জানিয়েছেন, তার সঙ্গে আটক সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার সহায়তায়ই এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পিটার।



সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। পিতর ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আল মাকসুদ, রেজাউল করিম ও রেফাত আহমেদ ওরফে রনিকে আটক এবং এটিএম কার্ড জালিয়াতি তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এক বছর আগে পোল্যান্ডের এই নাগরিক ম্যান পাওয়ার বিজনেসের (জনশক্তি ব্যবসা) ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিলো এখানে এসে প্রতারণা করা। দেশে এসেসিটি ব্যাংকের এই তিন কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের আগে তিনি বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারে সময় তার কাছে থেকে একটি পাসপোর্ট ও জার্মানির পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। ইউক্রেনে জন্ম হলেও তিনি জার্মানির নাগরিক। তার আসল নাম থমাস। অন্যের পাসপোর্ট চুরি করে পিতর নামে বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশি এক নাগরিককে বিয়ে করেন। একটি সন্তানও রয়েছে তার।

মনিরুল ইসলাম জানান, পিতর আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত। তার চক্র পূর্ব ইউরোপের রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইউক্রেন পোল্যান্ড, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তৎপর রয়েছে। সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মীর সহায়তায় এর আগেও অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেন পিতর।

ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার জানান, পিতরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রথমেই তিনি মাকসুদের নাম বলেন। তাকে আটক করলে জিজ্ঞাসাবাদে মাকসুদ দু’জনের নাম বলেন। সে দু’জন হলেন রেজাউল করিম ওরফে শাহীন এবং রেফাত আহমেদ ওরফে রনি।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকেই রিমান্ডে নেওয়া হবে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম জানান, এই চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত আছে। এরমধ্যে দু’জন দেশের বাইরে চলে গেছে। রয়েছেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশিও। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আরও তদন্ত করা হবে।

এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় এ চারজনসহ মোট পাঁচজনকে আটক করা হলো। এর আগে, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এক বিদেশিকে আটক করা হয়। পরিচয় জানানো না হলেও তিনি পূর্ব ইউরোপের একটি দেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, বনানীতে অবস্থিত একটি এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে পূর্ব ইউরোপের দেশটির ওই নাগরিককে শনাক্ত করা হয়। আটক ওই ব্যক্তির কাছে একাধিক দেশের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।

গত ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজধানীর ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চার বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরি ও পরবর্তী সময়ে কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকদের অজান্তে টাকা তুলে নেওয়া হয়। বিষয়টি ১২ ফেব্রুয়ারি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় বনানী থানায় ইউসিবি এবং পল্লবী থানায় সিটি ব্যাংক আলাদা দু’টি মামলা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতির ঘটনায় ৪টি ব্যাংকের ৪০ জন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের হিসাব থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬/আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা.

এসজেএ/এইচএ/এটি

** পোল্যান্ডের নাগরিক ও সিটি ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।