ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যাংকিং খাতেও বেড়েছে নারীর কর্মসংস্থান

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
ব্যাংকিং খাতেও বেড়েছে নারীর কর্মসংস্থান ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: কর্মক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ থাকলেও এগিয়ে যাচ্ছেন দেশের নারীরা। ব্যবসা, বাণিজ্য, প্রশাসনিক ক্যাডার ও রাজনীতির পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতেও বেড়েছে নারীর কর্মসংস্থান।


 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ২০ হাজার ৬০২ জন। সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা দুই হাজার ৯শ’ ২৩ জন। সবচেয়ে কম রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে। এ ব্যাংকটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৫৩ জন।
 
বেসরকারিখাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে নারী কর্মকর্তায় শীর্ষে রয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা এক হাজার ৫৬ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে মধুমতি ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংকে মাত্র ৩৫ জন করে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নারী ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন। নাম নাজনীন সুলতানা। রয়েছেন জিন্নাতুল বাকেয়া নামের একজন নারী নির্বাহী পরিচালক। জনতা ব্যাংকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আফরোজা গুল নাহার ও হোসনে আরা বেগম নামের দু’জন নারী।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পদে ৯ জন নারী ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বেশ কয়েকটিতে নারী মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কয়েকজন। দায়িত্ব পালন করছেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও।
 
এসব নারী কর্মকর্তারা কার্যরত ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ দেশব্যাপী প্রায় ১০ হাজার শাখায় কাজ করছেন।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৫ কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে নারী ব্যাংকার ২০ হাজার ৬০২ জন। নারী কর্মকর্তার এ সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
 
এমনটাই বলা হয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’র (বিআইবিএম) জরিপে। এতে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল শেষে ব্যাংক খাতে জনবল ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৮৫০ জন। এদের মধ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ২৯৬ জন অর্থাৎ ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ পুরুষ। নারী ব্যাংকারের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৫৪ জন; যা মোট জনবলের ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
 
২০১০ সালে ব্যাংক খাতে মোট জনবল ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৯ জন। তার মধ্যে নারী কর্মী ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১০ পর থেকে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১১ সালে ব্যাংক খাতে এক লাখ ৪৩ হাজার ২১০ জন জনবলের মধ্যে নারী ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে জনবল বাড়ছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। নারীদের অফিস সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটি নিশ্চিত করা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা, শিশু সন্তানদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়া নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকার কারণে অনেক সময় ব্যাংকে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মের প্রকৃত মূল্যায়ন করা হয় না, যা নারীর উন্নয়ন, অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়। এ কারণে নারী কর্মীদের ছুটি ভোগের বছরে তাদের বার্ষিক কর্ম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগের বছর বা পূর্ববর্তী তিন বছরের গড়ের মধ্যে যেটি উত্তম, সেটি বিবেচনায় নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
 
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে মানবেতর জীবন ও ১২ ঘণ্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সে সময় তাদের ওপর নেমে আসে পুলিশি নির্যাতন।
 
১৮৬০ সালে ঐ কার‍খানার নারী শ্রমিকরা ‘মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন’ গঠন করেন। আর সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯০৮ সালে ১৫০০০ নারী কর্মঘণ্টা, ভালো বেতন ও ভোট দেওয়ার অধিকার দাবি নিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে মিছিল করেন। তারপর ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেনহেগেন শহরে অনুষ্ঠিত এক আর্ন্তজাতিক নারী সম্মেলনে জার্মানির নারীনেত্রী কারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করেন।
 
১৯১১ সালে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ ‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’ পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকেও জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ১৯৯১ সালে এ দিবসটি পালন করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৬
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।