ঢাকা: আজমাইন রি-রোলিং স্টিল মিলের শ্রমিক রব্বানি ও লাভলু। কারখানায় কাজ করার সময় জানুয়ারি মাসে রব্বানির পায়ে নিচের অংশে রড ঢুকে যায়।
আজমাইন কারখানার মতো দেশের ৯৫ শতাংশ রি-রোলিং স্টিল মিলই শ্রম আইনের বেশিরভাগ ধারা অমান্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে রি-রোলিং স্টিল মিল শ্রমিক ফ্রন্ট সূত্রে।
শুধু ছোট স্টিল মিলগুলোই নয়, বড় স্টিল, রি-রোলিং মিলেগুলোও শ্রম আইন বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনটির।
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দেশের বড় স্টিল মিল গুলোর মধ্যে বিএসআরএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। শ্রম আইনের কোনো ধারাই তারা যথাযথভাবে মানছেন না। কর্মঘণ্টার দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ৩০ মিনিট বিরতি দেওয়ার কথা থাকলেও বিএসআরএমের শ্রমিকরা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরাও। দুর্ঘটনা কবলিত হলে শ্রম আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ পান না বলেও অভিযোগ তাদের।
রি-রোলিং স্টিল মিলের শ্রমিকরা কাজের সময় দুর্ঘটনা কবলিত হলে আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ পান না বলে দাবি করেন রি-রোলিং স্টিল মিল শ্রমিক ফ্রন্টের দফতর সম্পাদক এস এম কাদির।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রম আইন অনুসারে রি-রোলিং স্টিল মিলে কর্মরত অবস্থায় আহত হয়ে পঙ্গু হলে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা মালিকপক্ষের। তাছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিক আহত হলে তার চিকিৎসার সব ব্যয়ভার মালিকপক্ষের বহন করার কথা থাকলেও তারা তা করছেন না। সম্প্রতি কাজ করার সময় আমাদের দু’জন শ্রমিকের শরীরের রড ঢুকে যায়। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা মালিকপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই। কিন্তু একমাসেও তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। দেশের ৯৫ শতাংশ রি-রোলিং স্টিল মিলের মালিকপক্ষই শ্রম আইন মানছেন না।
রি-রোলিং স্টিল মিল শ্রমিক ফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ রি-রোলিং স্টিল মিলে প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
শ্রম আইন’২০০৬ অনুসারে রি-রোলিং স্টিল মিলের শ্রমিকদের প্রতি দুই ঘণ্টায় ৩০ মিনিট বিরতি দেওয়ার কথা। কিন্তু মালিকপক্ষ প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বিরতি দিচ্ছেন। একদিনে বিরতি ও ওভারটাইমসহ ১০ ঘণ্টার বেশি একজন শ্রমিককে দিয়ে কাজ না করানোর বিষয়েও উল্লেখ আছে আইনে। কারণ, এই মিলগুলোতে গড়ে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। কিন্তু কারখানাগুলো এ আইন মানছে না। দিনে ১৫ ঘণ্টা থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছে কারখানাগুলোতে।
আজমাইন স্টিল মিলের শ্রমিকরা জানান, শ্রমবিধি অনুসারে রি-রোলিং স্টিল মিলের শ্রমিকদের অধিক তাপমাত্রায় কাজ করার কারণে দিনে দুই লিটার স্যালাইন বা চিনি-গুড়ের সরবত দেওয়ার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ পর্যাপ্ত পরিমাণে তাও দিচ্ছে না। এতে করে শারীরিকভাবে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও দাবি করছেন শ্রমিকপক্ষ।
রি-রোলিং স্টিল মিলের অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রি-রোলিং স্টিল মিলের শ্রমিকদের শ্রম আইন ও শ্রমবিধি অনুসারে যেসব সুবিধাদি পাওয়ার কথা, তার বেশিরভাগ থেকেই শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা প্রতিনিয়ত এসব অভিযোগ পাই। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছি আমরা। শ্রম আইন ও শ্রমবিধি লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপারাধ বলেও জানিয়েছেন এই শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ।
শ্রম আইন ও শ্রমবিধি রি-রোলিং স্টিল মিলগুলোতে শতভাগ না মানার কথা স্বীকার করেছেন খোদ বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. মাহবুবুর রশীদ। তবে এমন কারখানা ৯৫ শতাংশ নয় বরং ১৫ শতাংশ বলে দাবি করেছেন মালিক সমিতির এই নেতা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বরাবরই চেষ্টা করি শ্রম আইন অনুসারে কারখানা পরিচালনা করতে। তবে অনেক সময় ছোট কারখানাগুলো শ্রম আইন শতভাগ মানতে পারছে না। এমন কারখানার সংখ্যা ১৫ শতাংশ হতে পারে, ৯৫ শতাংশ নয়। আমরা যাই করি না কেন, তা শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই করি। নয়তো ৪০০ কারখানা দেশে টিকে থাকতে পারতো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
ইউএম/এএসআর