ঢাকা: ডায়রিয়া, কলেরা, ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, টাইফয়েট, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বেশিরভাগ মরণব্যাধির মূল কারণ দূষিত পানি। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় সরবরাহ করা পানি সাপ্লাই লাইনের মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে।
নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘নিরাপদ পানি রেগুলেটরি কমিশন’ গঠন ও পানির অপচয় কমানোর প্রতি জোর দেন তারা। এছাড়া সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আইন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক, পানি বিশেষজ্ঞ ও সমাজের বিশিষ্টজনরা।
শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় ইডব্লিউএমজিএল’র কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ আয়োজিত ‘নিরাপদ পানি : সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন বক্তারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র সম্পাদক নঈম নিজাম।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি, ‘পানির অপর নাম জীবন’। কিন্তু এখন পানিকে জীবন বলা যায়? কতোটুকু নিরাপদ পানি আমরা পান করছি? নগরে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা কতোটুকু নিরাপদ? পানির জারে শ্যাওলা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে।
র্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেন, বাসাবাড়িতে যেসব বোতল বা জারজাত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তার ৯০ শতাংশই দূষিত। আমি গত এক বছরে ২৪টি পানি বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মাত্র ছয়টির মোটামুটি মান পেয়েছি। বাকি ১৮টিই বন্ধ করে দিয়েছি। এরা ওয়াসার পানি সরাসরি জারে ভরে বিক্রি করছে। পাশাপাশি ওইসব জার ফুডগ্রেডের না। বাজারে পেট বোতলে যেসব পানি পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই মূল কোম্পানি তৈরি করছে না। চানখারপুলে বাড়ির ছাদের ওপরও এগুলোর নকল ফ্যাক্টরি গজিয়ে উঠেছে। ওইসব পানি পান করার চেয়ে ওয়াসার পানি সরাসরি ফুটিয়ে পান করা ভালো।
তিনি আরও বলেন, কিটনাশক ব্যবহারের কারণে জাতির সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে ভেজাল। বিস্কুট, বনরুটিতে বেকিং পাউডারের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এ রাসায়নিক কিডনি বিকল করে দিচ্ছে। বাজারের ৭০-৮০ শতাংশ লুব্রিকেন্ট ভেজাল। এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। এর সঙ্গে অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার জড়িত। সবাইকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে বসুন্ধরা গ্রুপের টিভি চ্যানেল নিউজ২৪। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিউজ২৪ এর চিফ রিপোর্টার নাজনীন মুন্নী।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সচিব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুসা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, আইসিডিডিআরবি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মনিরুল আলম, এলজিআরডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল হাসান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম ইব্রাহিম, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাউথ এশিয়া ওয়াশ রেজাল প্রোগ্রামের হেড অব কান্ট্রি কোঅর্ডিনেশন ইউনিট পার্থ হেফাজ সেখ, ওয়াসার সাবেক এমডি ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আজহারুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, স্যানিটেশন ও পানি বিশেষজ্ঞ আব্দুল হাকিম, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা, সাইটসেভার্স’র অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের কোঅর্ডিনেটর আলিম বারী, ব্যারিস্টার আহসান হাবিব প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
কেআরএম