ঢাকা: আগামী জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হবে নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২। নতুন আইনে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে মূসক পরিশোধ করতে হবে।
এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ জুন থেকে ই-মূসক নিবন্ধন নিতে হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সনাতনী মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বা মূসক নিবন্ধনের পরিবর্তে ই-মূসক নিবন্ধন নিতে হবে।
তবে ই-মূসক নিবন্ধনের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ই-টিআইএন নম্বর, মোবাইল নম্বর, ব্যাংক হিসাব ও ই-মেইল ঠিকানা চাওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের সাড়া মেলছে না।
বিশেষ করে ব্যাংক হিসেব নিয়ে ব্যবসায়ীরা সংশয় প্রকাশ করলেও এনবিআর কর্মকর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, লেনদেন ও স্বচ্ছতার সুবিধার্থে ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ৮ লাখ ৪০ হাজার ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৩২ হাজার।
এর মধ্যে নিবন্ধিত কিছু প্রতিষ্ঠান প্যাকেট ভ্যাটের আওতায় রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিলেও ব্যবসা করে না। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না।
তিনি বলেন, নতুন কাউকে মূসক নিবন্ধন নিতে হলেও এসব তথ্য দিতে হবে। জুলাই থেকে ভ্যাট অনলাইন চালু হলে নতুন ও পুরান সবাইকে অনলাইনে ভ্যাট দিতে হবে।
একাধিকবার তথ্য চাওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেন এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ভ্যাট অনলাইন কার্যকরে ই-মূসক নিবন্ধন নিশ্চিত করতে চারটি তথ্য চেয়ে কমিশনারদের প্রথমে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে সাড়া আসেনি।
‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ও লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশনারের মাধ্যমে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ফর্মও দেওয়া হলেও আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে। ’
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আরো একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। তাতেও বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, ভ্যাটের সব লেনদেন হবে অনলাইনে, হয়রানি থাকবে না। এসব তথ্য দিলে ব্যবসায়ীদের আর কখনো ভ্যাট অফিসে আসতে হবে না।
ভ্যাট নিবন্ধন সনদ থেকে শুরু করে সব ই-মেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত কিছু হলে মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে, বলেন তিনি।
ব্যাংক হিসাব জরুরি কারণ, যদি ব্যবসায়ী ব্যাংকে অথরাইজড করে তার হিসাব থেকে যে পরিমাণ মূসক প্রযোজ্য হবে তা অটোমেটিক পরিশোধ করা যাবে।
ব্যাংক হিসাব থেকে অতিরিক্ত নেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী যাছাই করে নিতে পারবেন। ব্যাংক হিসাবে অটোমেটিক কর রেয়াতের অংশ চলে যাবে।
ই-মেইলে ভ্যাট রিটার্নের একটি কপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাতে বলা হবে যে, আপনার রিটার্ন মেয়াদ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এছাড়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠিয়েও ব্যবসায়ীকে জানানো হবে। এসব সুবিধা নিতে ই-মূসক নিবন্ধনে তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এনবিআর সদস্য ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, নিবন্ধনের তথ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
ব্যবসায়ীদের আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। আশা করি সাড়া দেবে। তথ্য ঘাটতি থাকলে সেক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধে বিড়ম্বনার শিকার হবেন ব্যবসায়ীরা, বলেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সব ব্যবসায়ী মহল নতুন আইন বাস্তবায়নে আমাদের সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে কমিশনারদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা রেজিস্ট্রেশনকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এর রেজাল্ট চাই।
এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, নতুন সিস্টেম সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা কিছুই জানে না। অনেক ব্যবসায়ী ই-মেইল কি জানে না।
তাদের প্রশিক্ষণে সময় প্রয়োজন। সে সময় তো এনবিআর দিচ্ছে না। ব্যাংক হিসাব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের ভীতি থাকায় তারা দিচ্ছে না বলে স্বীকার করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৬
আরইউ/জেডএস