ফেনী: সোনাগাজী আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার। আয়তন ও পরিধির দিক দিয়ে এটি দেশের সর্ববৃহৎ।
দেশের খাদ্যঘাটতি পূরণেও এ হাঁস প্রজনন খামারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু তদারকি করা গেলে এ খামরটির রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, শেড, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে এ সম্ভাবনাময় খামারটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ব্যাহত হচ্ছে হাঁসের বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন।
খামারটির হিসাবরক্ষক জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এ খামারের ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ হলেও উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৪০ হাজার। বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ। উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখের মতো।
নতুন ভবন আর শেডের অভাবে লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এ খামারটির কারণে এ অঞ্চলের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।
খামারের ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে জনবল সংকটে খামারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে খামারের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। খামারে একজন ব্যবস্থাপক, একজন পিডিও, একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, একজন কারিগর, একজন কার্যসহকারী, একজন ইলেকট্রিশিয়ান, ১০ জন পরিচর্যা কর্মী, ২ জন প্রহরীসহ মোট ১৮টি পদ থাকলেও বর্তমানে এটিতে ১১ জন লোক কর্মরত আছেন। ১০ জন পরিচর্যা কর্মীর দরকার হলেও রয়েছেন ১ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটে এতো বড় একটি খামারে সব কাজ দেখাশোনা করা কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ডিম স্থানান্তর, সংরক্ষণ, বাচ্চা পরিচর্যা, সরবরাহসহ খামারের আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় খামারের বিল্ডিংগুলো লবণাক্ততার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সংস্কার কাজ না করা হলে ভবিষ্যতে খামারে বাচ্চা উৎপাদন চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। এ খামারে ইতালি থেকে আনা ভিক্টোরিয়া ইনকিউবিটরের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে আট হাজার ডিমের বাচ্চা ফোটানোর ধারণক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে খামারে ডিমের উৎপাদন কম। প্রতি সপ্তাহে ৯শ’ থেকে এক হাজারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়।
খামারটি লাভজনক হওয়ায় সরকার একে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেছে। সোনাগাজী বাজারের পশ্চিম পাশে ১০ দশমিক ৫০ একর ভূমির ওপর ১৯৯৪ সালে এ হাঁস প্রজনন খামার প্রকল্প শুরু করা হয়। হাঁস পালনের জন্য নির্মাণ করা হয় ৯টি শেড, একটি দোতলা অফিস ভবন, একটি হ্যাচারি, একটি গোডাউন, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার ও একটি ডরমেটরি। একজন কর্মকর্তা ও ১৪ জন কর্মচারী দিয়ে ২০০২ সালে হাঁস পালন ও প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। খামারটিতে বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক হাঁস রয়েছে ৯২০টি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস রয়েছে এক হাজার ৩২৪টি।
খামারে উৎপাদিত বাচ্চা হাঁস সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের কাছে বিক্রি করা হয়। একদিন বয়সের বাচ্চার পিস ২০ টাকা ও এক সপ্তাহ বয়সের বাচ্চার পিস ৩৫ টাকা।
এ খামারে উৎপাদিত হাঁসের জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না পিকিন, বেইজিং, খাকি ক্যাম্বল, ভারতীয় রানার, জিংডিং ও দেশি কালো হাঁস। এসব বাচ্চা কিনে উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেই হাঁস পালনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন।
এ খামারে উৎপাদিত হাঁস অন্য হাঁসের তুলনায় আলাদা। দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড়। বছরের ১০ মাস ডিম দেয়।
সোনাগাজীর চর খোন্দকার এলাকার ক্ষুদ্র খামারি আছিয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানান, বাচ্চা কিনে এক-দুই মাস লালন-পালন করে প্রতি জোড়া ৩০০-৩৫০ টাকা বিক্রি করেন তিনি। এতে তার বেশ ভালো লাভ হয়।
ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান জানান, এ খামারে প্রজননের মাধ্যমে হাঁসের উন্নত জাত উৎপাদন করা হয়। অন্য হাঁসের তুলনায় এ হাঁস ডিম বেশি পাড়ে। মাংসও বেশি দেয়। তাই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এ হাঁস নেওয়ার জন্য ভিড় জমায়।
তিনি জানান, পোলট্রি শিল্পের নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি খামারে বছরে তিন মাস শেড খালি রাখতে হয়। এ সময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে শেডগুলো পুনরায় হাঁস উৎপাদনের উপযোগী করে তোলার নিয়ম। কিন্তু সরকারি এ খামার চালুর পর থেকে কখনো শেডগুলো খালি করে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ মনে করে, এ খামারটির প্রতি যদি সরকার যথাযথভাবে নজর দেয় তাহলে আপার সম্ভাবনা রয়েছে এটির। বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে খামারটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৬
কেআরএম