আবদার বটে! মান রক্ষায় ব্যর্থতা, নানাভাবে ক্রেতা ঠকানো, সরকারের ভ্যাট ফাঁকিসহ বিভিন্ন অপরাধের পর উল্টো নিজেরাই আন্দোলনে যাচ্ছে চেইন সুপারমার্কেটগুলো। রোববার সারাদেশে চেইন সুপারমার্কেটগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ যখন একটু কঠোর হতে শুরু করেছে, তখনই পাল্টা হুমকির মতো এই ধর্মঘটের ঘোষণা এলো।
শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রেসরিলিজ পাঠিয়ে এই ধর্মঘটের কথা জানান দিয়েছে সংগঠনটি। যাতে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের সুপারমার্কেটগুলোতে খাদ্য ও পণ্যের আধুনিকতম সংরক্ষণ ও বিপণণের জন্যে কাজ করে আসার দাবি করা হয়েছে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
আর সরকারকে দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে যে, নীতিমালায় বৈষম্য ও আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের অব্যাহত হয়রানি করা হচ্ছে।
আগোরা, মীনা বাজার, প্রিন্স বাজার, ক্যারি ফ্যামিলি, শপ অ্যান্ড সেফ, আলমাস, আমানাসহ সব ধরনের চেইন সুপার মার্কেট এই সিদ্ধান্তের কারণে রোববার বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এই বিকাশমান খাতের সাথে আজ-হাজার হাজার কর্মী, কৃষক ও উৎপাদনকারীর ভাগ্য জড়িত। অথচ সুপারমার্কেট খাত একদিকে বৈষম্যমূলক নীতিমালার শিকার, অপরদিকে উক্ত নীতির প্রয়োগকালেও আমরা অনর্থক হয়রানির শিকার। ’
বৈষম্যমূলক নীতিমালা বলা হলেও তার কোনও সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট এই সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
বরং সরকার পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, নিরাপদ খাদ্যের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে নিয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সুপারমার্কেটে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।
নিজেদের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতির সংস্কারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী দাবি করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেছেন, সুপারমার্কেট খাত এদেশে কোল্ড চেইন থেকে শুরু করে খাদ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণের আরও অনেক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তক।
তিনি এও দাবি করেছেন, সুপার মার্কেট থেকেই এদেশে নিরাপদতম খাদ্যের বিস্তার ঘটেছে।
কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়, পুলিশ-র্যাব ও মিডিয়ার অংশগ্রহণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
আর অভিযোগ করা হয়েছে, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাদ্য পরীক্ষা করে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে।
দেখে-শুনে মনে হয়, এ ধরনের অভিযানে সুপারমার্কেটগুলোকেই টার্গেট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে, দাবি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের।
তিনি আরও বলেন, সরকারের আচরণ এমন, যেন এই দোকানগুলোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্রেতাদের পচা বা ভেজাল পণ্য বিক্রি করা।
যে সকল কোম্পানি প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে তাদের অবকাঠামো ও ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো কাজ করবে যার ফলে তারা ক্রেতাদের আস্থা হারাবে- এটা কোনো যুক্তিতেই টেকে না, দাবি জাকির হোসেনের।
মিডিয়ার দায়িত্বশীলতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে বলা হয়েছে, একেক সময় একেকটি কর্তৃপক্ষ মিডিয়াকে সাথে নিয়ে বিশাল বহর নিয়ে অভিযানে আসে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় খাদ্যের গুণগত মানের চেয়ে মিডিয়ায় প্রচারণাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
যে সুপারমার্কেটগুলোকে সরকার নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনে সঙ্গী হিসেবে পেতে পারে, তাদেরকে এভাবে অনর্থক প্রতিপক্ষ বানানো খুবই দুঃখজনক, বলেন জাকির হোসেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জ্ঞান দিতেও ছাড়েননি এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেছেন, উৎপাদন ও সরবরাহের বিস্তৃত অঙ্গনে ভেজাল নিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল সুপারমার্কেট বা নামি-দামি দোকানে হানা দিয়ে খাদ্যের শুদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এধরণের আচরণকে প্রচারমূখী তৎপরতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং একটি বিকাশমান খাতকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বৈষম্যমূলক ভ্যাট ও ট্যাক্স-ডিউটি কাঠামোর কারণেও এখন রীতিমত জর্জর। এককালের অনেক জনপ্রিয় দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে নিকটবর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় সুপারমার্কেটের সংখ্যা যথাক্রমে ১০০ ও ২০০ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৩০০০ ও ১০০০ অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে একই সময়ে যতগুলো নতুন দোকান খুলেছে, ততগুলো বন্ধও হয়েছে, বলে তথ্য দেন জাকির হোসেন।
সরকারের সর্বোচ্চ- নীতিনির্ধারকেরা যখন দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চেষ্টা করছেন, তখন ঐ নীতি প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের একাংশের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অতি সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, বলেন তিনি।
দোকান বন্ধ রাখার পক্ষে এসব যুক্তি দেখিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, একদিন দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতা ও সকল স্টেকহোল্ডারদের কোনো অসুবিধা হয়ে থাকলে, তারা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দাবি করে তিনি বলেন, আইনের অপপ্রয়োগ থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমাদের কর্মীদের জন্যে আমরা কাজের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ চাই। বিনিয়োগের যথাযথ মূল্যায়ন ও মর্যাদা চাই।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই সমস্যা নিরসনের আবেদনও জানান তিনি। জাকির হোসেন বলেন, আশা করি, দোকান বন্ধের মতো অভূতপূর্ব ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা শীর্ষ নীতিনির্ধারক ও ক্রেতা সাধারণের সামনে আমাদের সংকটের গভীরতা তুলে ধরতে পারবো।
বাংলাদেশ সময় ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৬
এমএমকে