ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দফায় দফায় জরিমানায়ও আগোরার থোড়াই কেয়ার!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৬
দফায় দফায় জরিমানায়ও আগোরার থোড়াই কেয়ার!

ঢাকা: ভেজাল ও মানহীন নিত্যপণ্য বিক্রির দায়ে দফায় দফায় জরিমানা গুণতে হচ্ছে চেইন শপ আগোরাকে (রহিমআফরোজ সুপারস্টোর)। তবু বন্ধ হচ্ছে না তাদের ঠকানোর ফাঁদ।

মোড়কবিহীন পণ্যে ছাড়ের নামে প্রতারণার ফাঁদ বসিয়েছে যেন আগোরা। আপাতত এই মোড়কবিহীন পণ্যকেই ক্রেতার পকেট কাটার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

চেইন শপটির সেগুনবাগিচা শাখায়ই মিললো এই ঠকানোর নমুনা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন পণ্যে ছাড়ের কথা বললেও তা বিক্রি করছে ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা থেকেও অধিক দামে। ক্রেতা টানতে দু’য়েকটি পণ্যে অফার করলেও তা আবার কৌশলে কেটে নিচ্ছে একেবারে কয়েকগুণ।

 

যেমন চেইন শপটি প্রতিকেজি ঢেঁড়স বিক্রি করছে ২৯ টাকা দরে। অথচ তাদের স্টোর থেকে কয়েক গজ দূরে এর চেয়েও ভালো ঢেঁড়স ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন সবজি বিক্রেতা আব্দুর রব।

বিদ্রুপ করে আব্দুর রবই বলে ওঠেন, আগোরায় প্রতিকেজি ঢেঁড়সে ৯ টাকা বেশি রাখে। ছাড়ের নামে ঢেঁড়সের মতো অধিকাংশ সবজিতেই ৯-১০ টাকা বেশি রাখে তারা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিকেজি ঢেঁড়স ২০, করলা ২০, পটল ২০, শসা ২০ টাকা দরে বেঁচি। প্রতিদিনের মাল (সবজি) প্রতিদিন সাফা করে ফালাই। আগোরার মতো পঁচা মাল রাহি না। তারপরও মানুষ পঁচা সবজি খাইতে কেন যায়, কে জানে?

আব্দুর রবের ছোট্ট দোকান ছাড়াও সেগুনবাগিচা ও অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা যায়,  অধিকাংশ পণ্যেই অতিরিক্ত দাম রাখছে আগোরা। যেমন- তারা মাঝারি রুই বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ১৯৭ টাকা। সাধারণ বাজারে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। সাধারণ বাজারের তুলনায় প্রায় ১৪০ টাকা বেশি রেখে ৩২০ টাকা দরে তারা বিক্রি করছে কাতল মাছ।
   
এ চেইন শপে প্রতিকেজি চায়না রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ২২৯ টাকা দরে। অথচ শপ থেকে কয়েক গজ দূরে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের আল আমিন স্টোরে একই রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।

আগোরায় প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা দরে। অথচ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট জগন্নাথপুর কাঁচাবাজারে আল্লাহর দান গোস্তের দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
 
চালেও অতিরিক্ত দাম রাখছে আগোরা। প্রিমিয়াম নাজিরশাইল অন্যান্য বাজারে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও একই মানের চাল শপটি বিক্রি করছে ৪৭ টাকা দরে।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ওজন ও পরিমাপ (পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই বিধিমালায় পণ্য মোড়কজাতকরণের ক্ষেত্রে মোড়কের গায়ে ব্যাচ নম্বর, উৎপাদন তারিখ, মেয়াদকাল, পরিমাণ, গুণাগুণ এবং কী কী উপাদানে পণ্যটি তৈরি তার উল্লেখ থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আগোরা সেই বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে যেন। মোড়কবিহীন পণ্যে অফারের কথা বলে ক্রেতার পকেট কেটে নিচ্ছে ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রির দায়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা গোনা প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, মোড়কজাত পণ্যের ব্যাপারে আইনে যেটুকু আছে তা প্রয়োগ করতে পারবো। কিন্তু ২০০ টাকা দরের রসুন ২২৯ টাকায় বিক্রি করলে আইনিভাবে হয়তো কিছু করা যাবে না। তবে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রে আমরা আগোরাকে সচেতন করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, ক্রেতাদের সুবিধার জন্য মোড়কবিহীন কিছু খুচরা নিত্যপণ্যের তালিকা করবো। তখন এসব পণ্য অধিক দামে বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ভেজাল ও পঁচা পণ্য কেউ বিক্রি করলে কোনো ছাড় নেই।

যদিও মোড়কজাত পণ্যেও প্রতারণা করে আসছে আগোরা। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণা ধরা পড়লেও থামছে না তারা। বিস্কুট, কোমল পানীয়, আফটার সেভ লোশন, টুথপেস্ট, হেয়ার অয়েল, কারি পাউডার, ওয়েফার বিস্কুটের (হক ডিং ডং) সিএম লাইসেন্স না নিয়ে অবৈধভাবে বিএসটিআই’র মানচিহ্ন ব্যবহার করায় আগোরাকে জরিমানা গুনতে হয়েছিল আগেই।

আগোরায় অধিক দামে পণ্য বিক্রি প্রসঙ্গে বিএসটিআই সহকারী পরিচালক আরাফাত হোসেন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জানি আগোরার মতো চেইনশপগুলোতে সচেতন মানুষ কেনাকাটা করতে যান। আমরা তো বাজারে কাঁদা পানির মধ্য থেকে মাছ কিনি। তবে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এরপরও পরবর্তী সময়ে আমরা আগোরার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো। কয়েকদিন আগেই পঁচা মাছ বিক্রির অপরাধে তাদের জরিমাণা করেছি। আমাদের আইন থেকে জরিমানা ও সাজা দিতে পারি। তবে এর আগে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মোড়কজাত পণ্যে দাম বেশি রাখার কোনো তথ্য থাকলে আমাদের সহায়তা করতে হবে। তবে সবজি ও মাছের দাম রাখা অনেকটা লটারির মতো। তবে কয়েক মাস পরে নিত্যপণ্যে অধিক দাম রাখার কোনো সুযোগ থাকবে না। বিএসটিআইয়ের লোগোর ওপরে নাম্বার থাকবে, এতে করে ক্রেতা যে কোনো ধরণের অভিযোগ করতে পারবেন।
 
একদিকে সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা জরিমানা করে চলেছে, অন্যদিকে আগোরা ভেজাল পণ্য বিক্রি করছে। এ সমস্যার সমাধান কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে যা আছে আমরা সেটাই করতে পারবো। আমরা সর্বোচ্চ আগেরাকে জরিমানা ও সাজা দিতে পারবো। তবে এর পরবর্তী সময়ে আগোরাসহ চেইনশপগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবো। আমরা টাকা দিয়ে আগোরা থেকে পঁচা মাছ কিনবো, এটা অনভিপ্রেত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।