বেনাপোল (যশোর): চলমান পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবারও দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এতে মাছ, পেঁয়াজ, পানপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের দুই শতাধিক ট্রাকে প্রায় একশ কোটি টাকার কাঁচাপণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তীব্র গরমের মধ্যে এসব পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উৎপাদন সামগ্রী ও সাধারণ পণ্যের আরো পাঁচ শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। সেখানেও বড় ধরনের লোকসানে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ধর্মঘটে বেনাপোল থেকে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন ভারত থেকে আসা কয়েকশ পাসপোর্ট যাত্রী। গন্তব্যে ফিরতে না পেরে বিভিন্ন আসাসিক হোটেল ও বাস কাউন্টারে তারা অপেক্ষা করছেন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছেন, সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা বাস ছাড়তে পারছেন না। এতে তাদের কিছু করার নেই।
যাত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন, জরুরি প্রয়োজনে যারা গন্তব্যে ফিরতে চাইছেন তাদের কাছ থেকে তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া আদায় করে ফায়দা লুটছে প্রাইভেট ও মাইক্রোবাস চালকরা। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগিদের এ দুর্ভোগ শেষ হবে এমনটি আশা করছেন তারা।
সোমবার (১৬ মে) সকালে বেনাপোলের স্থলবন্দর, বাস টার্মিনাল, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকায় ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বাংলানিউজকে জানান, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমিটির ডাকা ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তারা বন্দর থেকে কোন আমদানি পণ্য পরিবহন করছেন না।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জরুরি কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে। ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে বিরুপ প্রভাব পড়বে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে সংশিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বেনাপোল সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, আটকে পড়া কিছু পাসপোর্টধারী যাত্রী তাদের কাউন্টারে অবস্থান করছেন। আবার অনেকে স্থানীয় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে ঠাঁই নিয়েছেন। ধর্মঘট প্রত্যাহার অথবা শেষ হলে তবেই যাত্রীবাহী বাস ছাড়া হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, ধর্মঘটের কারণে এপথে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল কম রয়েছে। তবে যাদের ভিসা শেষ হয়েছে এদের বাধ্যতামূলক ভারত থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে।
ভারত থেকে ফিরে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রী বরিশালের আকরাম জানান, তিনি পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। আজ ভিসা শেষ হওয়াতে বাধ্য হয়ে তাকে ধর্মঘটের মধ্যে ফিরতে হয়েছে। বেনাপোল থেকে দূর পাল্লার কোন বাস ছাড়ছে না। এছাড়া এখানকার হোটেলেও ছিট নাই। মাইক্রোবাস চালকরা চার গুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এখন কি করবো ভেবে পারছিনা।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম বক্স দুদু জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত খুলনা বিভাগে বাস, ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান জানান, চলমান ধর্মঘটের মধ্যে যেন কোন অপ্রীতীকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
জানা যায়, কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মাত্র চার ঘণ্টায় ভারতের কলকাতা থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে একটি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে পারে। ঠিক একই ভাবে বেনাপোল বন্দর থেকে রফতানি পণ্য পৌঁছায় কলকাতায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের শিল্পকারখানার ৭০ শতাংশ কাঁচামাল বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়।
এছাড়া প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানিও হয়। প্রতিবছর সরকার এ বন্দর থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। ধর্মঘটে আমদানি পণ্য আটকা থাকায় দেশের শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানায় দায়ের করা সড়ক দুর্ঘটনার একটি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ওই ঘটনায় সরকারের ক্ষতিপূরণ আইনের পরিপন্থিভাবে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে এলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে তারা এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
আরএ