ঢাকা: ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মজুরি বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। প্রাথমিকভাবে আগামী ২৫ মে মজুরি বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে শ্রমিকদের সূত্রে।
শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আনুষ্ঠানিক আন্দোলন শুরু হবে মজুরি বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে। এ নিয়ে গত প্রায় দুই মাস ধরে একাধিকবার বৈঠক করেছেন শ্রমিক নেতারা। অবশেষে ১২টি শ্রমিক সংগঠন সিদ্ধান্ত নেয় যে, ২৫ মে মজুরি বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে এ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হবে। স্মারকলিপিতে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু মজুরি বোর্ডেই নয়, পরবর্তীতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএতে স্মারকলিপি দেবেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। এ সময়কালে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরিতে তাদের জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মালিকরা এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যদি আগে ভাগেই মজুরি বাড়াতেন, তাহলে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে হতো না। কিন্তু মালিকরা এসব বিষয়ে নজর দিচ্ছেন না।
মজুরি বোর্ডের পক্ষ থেকেও মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমান মজুরি বোর্ডের বয়স প্রায় তিন বছর। আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ে মজুরি কাঠামো পরিবর্তনের বিষয়ে প্রস্তাবনা দেবো বলে ভাবছি। কারণ, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হলেও শ্রমিকরা তাদের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাচ্ছেন না। কাঠামোগত পরিবর্তন হলে একটি যথোপযুক্ত ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা সম্ভব।
একদিকে টিপিপি’র (ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ) কারণে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অন্যদিকে ডলার, ইউরোর মূল্য কমে যাওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মালিকদের। তার ওপর ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে তা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মনে করছেন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে দেশের পোশাক শিল্পের অবস্থা খুব একটা ভালো না। টিপিপি’র কারণে আমাদের ভিয়েতনামের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে। তাছাড়া ডলার ইউরোর দাম কমেছে। ফলে আমাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ সময় ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো সম্ভব হবে না। এসব নিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত হলে আমাদের ফের ইমেজ সঙ্কটে পড়তে হবে।
২০১৩ সালের শুরু থেকেই ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। গঠিত হয় মজুরি বোর্ড। মালিক, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মজুরি বোর্ডের ১০ম সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হয়।
বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস রয়েছে- যাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৬
ইউএম/এএসআর