ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পায়রায় আগ্রহী ২৪ কোম্পানি, বাস্তবায়ন ১৯ ভাগে

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
পায়রায় আগ্রহী ২৪ কোম্পানি, বাস্তবায়ন ১৯ ভাগে

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত প্রকল্পের অন্যতম পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর। দ্রুত গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।

এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ইটালি, ভারত, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ২৪টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে পায়রায়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র এ বাংলানিউজকে তথ্য জানিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে চীনা কোম্পানির আগ্রহ। তিনটি চীনা কোম্পানি পায়রায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।
 
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত ১৯টি কম্পনেন্ট (স্তর) নির্ধারণ করেছে সরকার। এরই ভিত্তিতে এই ১৯ ভাগ বা স্তরে আগ্রহী বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি নির্বাচনের বিষয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে সবার আগে প্রয়োজন ৩৫ কিলোমিটার রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণ।
 
গত বছরের ২৫ আগস্ট ১৯টি কম্পনেন্টের জন্য ‘ইওআই’ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এরই ভিত্তিতে বিশ্বের নামকরা ১০টি প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও হারবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের প্রস্তাব দাখিল করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর দাখিল করা প্রস্তাব নৌ-পথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে। মূল্যায়ন কমিটি ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে। পরে সবচেয়ে যোগ্য ও কারিগরিভাবে দক্ষ হিসেবে বেলজিক কোম্পানি ‘জান ডি নুল’কে চূড়ান্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘এফডিআই’ পদ্ধতিতে ড্রেজিং কাজ সম্পন্নের সুপারিশ করে।  

মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ‘জান ডি নুল’ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অনুমতি  দেয়। সেই মোতাবেক বুধবার  পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বেলজিক এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝেতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
 
সবার আগে ড্রেজিং শুরুর বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়লাভিত্তিক প্রকল্প ১৩২০ মে. ও. নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট এপ্রিল ২০১৯ সালের মধ্যে তাদের প্রকল্প চালু করতে চায় সরকার। এ প্রকল্প চালু করার জন্য কয়লা আমদানি করতে হবে। কয়লা আমদানিতে কোম্পানিটিকে পায়রা বন্দরই ব্যবহার করতে হবে। বন্দরের মূল চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত শুরু করা গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা জাহাজ যোগে জেটিতে আনা সম্ভব হবে।
 
এছাড়া ১৯টি স্তরের এর মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং সবার আগে প্রয়োজন। কেননা ক্যাপিটাল ড্রেংজিং শুরু করার উপর অন্য স্তরের বাস্তবায়ন সরাসরি সম্পৃক্ত। এটা শুরুর পরই আগ্রহী দেশ ও কোম্পানি পায়রা বন্দরে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।
 
নৌ-মন্ত্রণালয় বলছে, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তার ‘মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা’ অনুযায়ী আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি মাল্টিপারপাস ও একটি বাল্ক টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো তৈরি করে বন্দর কার্যক্রম শুরু করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজটি ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে শুরু করা হলে মধ্য-মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হবে।
 
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচ আর উইলিংফোর্ড বহিঃনোঙর থেকে রাবনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল দীর্ঘ চ্যানেলের ড্রেজিং প্ল্যান প্রণয়ন করে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ মিটার ড্রাফটের মাদার ভ্যাসেল চলাচল উপযোগী চ্যানেলে সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল ও সংরক্ষণ ড্রেজিং সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
 
পোতাশ্রয় ড্রেজিংয়ে খ্যাতনামা জান ডি নুল
মন্ত্রণালয় বলছে, পায়রা বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিং কাজে পৃথিবীর শীর্ষ অবস্থান অধিকারী বেলজিয়াম কোম্পানি জান ডি নুল এর ১৯৫১ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে নরম মাটির স্তর থেকে শক্ত পাথরের স্তর ড্রেজিং করে ২০ মিটার পর্যন্ত গভীর চ্যানেল ড্রেজিং কাজের অভিজ্ঞা রয়েছে। কোম্পানিটি সর্বাধুনিক ট্রেইলিং সেকশন হপার ও গ্যাস কাটার সেকশন ড্রেজিং প্রযুক্তির ড্রেজিং বহরে সর্বোচ্চ ১৫০ মিটার গভীরতার ড্রেজিং উপযোগী  ২৩২০ ঘন  মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৪৬,০০০ ঘন মিটার সাইজের ৪৭টি হপার ড্রেজার রয়েছে। ডি নুল, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার বহু বন্দরে বৃহৎ পরিসরে ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করেছে।
 
রটারডাম বন্দরের সাদৃশ্য থাকছে পায়রায়
পায়রা সমুদ্র বন্দরে বিশ্বখ্যাত নেদারল্যান্ডের রটারডাম বন্দরের ছোঁয়া থাকছে বলে জানিয়েছেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান। বাংলানউজকে তিনি জানান, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচ আর উইলিংফোর্ড পায়রা বন্দরের একটি অংশকে রটারডাম বন্দরের আদলে ডিজাইন করেছে। বলা যায় নৌপ্রযুক্তিতে বিখ্যাত নেদারল্যান্ডের এই খ্যাত নামা বন্দরের মতো একটা বন্দর থাকছে পায়রা বন্দরের একটি অংশে। তিনি জানান, নেদারল্যান্ড নিজেও পায়রা বন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
 
 
অর্থনীতির ভবিষ্যত চালিকা শক্তি পায়রা
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দ্রুত বর্ধনশীল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে দেশের বন্দরভিত্তিক কার্যক্রমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিবছরে দেশের বন্দরের ব্যবহার ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি হয়ে উঠেছে নতুন একটি বন্দরের। বর্তমান দু’টি বন্দরে যে আকারের জাহাজ আসতে পারে, এর চেয়ে বড় আকারের ও বেশি গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দরের জেটিতে আসতে পারলে সামগ্রিকভাবে লাভবান হতে পারবে দেশের শিল্প, বাণিজ্য এবং অর্থনীতি।
 
এ ব্যাপারে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবিষ্কার ও নির্দেশে আজ আমরা দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পেতে যাচ্ছি। তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। সমুদ্রবন্দর ঘিরে তৈরি হবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে থাকছে নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস শেরে ই বাংলা। বরিশালের সাথে পটুয়াখালীর চারলেন বিশিষ্ট সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে ১২ মিটার বৃহৎ সাইজের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে।

 
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন,  বর্তমানে পায়রার পোতাশ্রয়ের স্বাভাবিক গভীরতা ১২ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত রয়েছে। এই পোতাশ্রয়ের বিস্তৃতি প্রায় ১১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ৪ কিলোমিটার। যা কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তৈল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ আরও অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
 
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃজনশীল কূটনৈতিক তৎপরতা ও নেতৃত্বে আমরা বিস্তীর্ণ সাগরের ওপর একচ্ছত্র মালিকানা অর্জন করেছি। এখন সময় অফুরান এই সমুদ্র সম্পদ ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও মজবুত করে তোলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
আরএম/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।