ঢাকা: প্রতিবছর ঈদে দেশের ছোট বড় মার্কেটসহ অভিজাত শপিংমলে ভারতীয় পোশাকের দাপট লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় সিনেমা, সিরিয়ালের নামের সঙ্গে নায়িকাদের নামেও থ্রি-পিচ, শাড়িতে ভরে যায় মার্কেটগুলো।
এবারো ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বৈধ পথে দেদারচ্ছে আমদানি হচ্ছে ভারতীয় পোশাক। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে এবারও পোশাকশিল্পে নেতিবাচকপ্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নিজেদের ব্যবসা নিয়ে অনেকটা দু:শ্চিন্তায়ও পড়েছেন তারা।
গত দুই মাসে দেশের বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় থ্রি-পিস,শাড়িসহ উন্নতমানের পোশাক চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কাস্টমস অফিস ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের (বিচার বিভাগ) সহকারী কাস্টমস কমিশনার আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় পোশাকের অবৈধ পাচার একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ারপোর্ট ও মৈত্রী ট্রেন থেকে গত দুই মাসে ৬১ লাখ টাকা মূল্যের থ্রি-পিছ ও শাড়ি আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে ৫৬৯টি থ্রি-পিছ ও ৬৬০টি শাড়ি জব্দ করা হয়েছে। মে মাসে জব্দ করা হয়েছে ৯৫০টি থ্রি-পিছ ও ১২৭৩ টি শাড়ি।
তবে প্রতিদিনই জরিমানা দিয়ে জব্দকৃত শাড়ি ও থ্রিপিছ ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলেও জানান তিনি।
আল আমিন বলেন, এসব যেহেতু আমদানিযোগ্য পণ্য, সে কারণে আটক করার পর ট্যাক্স ও অর্থদণ্ড দিয়ে পণ্য ফেরত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত দুই মাসে বিজিবির সদস্যরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পোশাক আটক করছে। গত ৫ মে সাতক্ষীরার কলারোয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে পাচার করে আনা শাড়ি ও থ্রি-পিস বোঝাই একটি ক্যাভার্ড ভ্যান আটক করে বিজিবি।
একই দিনে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর-কালীগঞ্জ মহাসড়ক থেকে দুই হাজার ৪৫০ পিস ভারতীয় শাড়ি, ৪৫০ পিস থ্রিপিস, ১১৭ টি ভারতীয় চাদর ও এক হাজার মিটার থান কাপড়সহ একটি ট্রাকও আটক করে বিজিবি। ১৫ মে রাজবাড়ীর পোড়াদহ রেলস্টেশন থেকে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১৬৭টি শাড়ি, ১১৩টি থ্রিপিস এবং ১২৭টি স্যুটপিস জব্দ করে বিজিবি। এর আগে ১২ এপ্রিল দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৮০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়ি-থ্রি-পিস আটক করা হয়।
এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে বৈধ পথে যে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পোশাক আমদানি হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান জানানো সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য বলে জানায় কাস্টমস সূত্র।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস অফিসের সহকারী কাস্টমস কমিশনার রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, চোরাই পথে পোশাক এলে ঈদ বাজারে দেশি পোশাক শিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব তো পড়বেই।
দেশি পোশাক ব্র্যান্ড বাংলার মেলার পরিচালক মতিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের সময় আমাদের সব সময় দেশি পোশাক নিয়ে দু:চিন্তায় থাকতে হয়। চোরাই পথে আসা ভারতীয় পোশাকের দাম কম থাকে। এই চোরাই পোশাকের কারণেই আমরা আগের তুলনায় ২০ শতাংশ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি।
দেশের পোশাক শিল্পের স্বার্থে বিদেশি পোশাকের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা জরুরি বলেও মত দেন মতিউজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
জেডএম/