ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিজিএমইএ ভবন ‘ভাঙতে’ বাকি এক ধাপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
বিজিএমইএ ভবন ‘ভাঙতে’ বাকি এক ধাপ

ঢাকা: সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সুউচ্চ ভবন ভাঙার নির্দেশনা বহাল রয়েছে। এখন ভবনটি ভাঙা থেকে রক্ষা পেতে বিজিএমইএ’র সামনে আইনি লড়াইয়ে বাকি রয়েছে মাত্র এক ধাপ।

সেটা হলো আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করতে হবে বিজিএমইএকে। আর এর জন্য লাগবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি।

রিভিউ আবেদন খারিজ হলে আদালতের রায়ে অবৈধ বলে চিহ্নিত ১৮তলার বিজিএমইএ ভবনটি চূড়ান্তভাবে ভেঙেই ফেলতে হবে সংগঠনটিকে।  

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা মনে করছেন, রিভিউ করে তেমন একটা ফল পাওয়া যায় না। কারণ, যেসব বিচারপতি রায় দেন, তারাই আবার রিভিউ আবেদনের শুনানি নেন। তাই রিভিউতে আগের দেওয়া রায় পরিবর্তন হওয়ার নজির খুবই কম।

আইন লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ।

গত বৃহস্পতিবার (০২ জুন) বিজিএমইএ’র আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর পরই এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র নেতারা। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেলে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পুনর্বিবেচনার আরজি জানাবেন বলেও জানান তারা।


তবে রিভিউ করে কতোটুকু ফল পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে সন্দিহান হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে আইনি সহায়তাকারী) আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ আবেদন না করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে। আর রিভিউ আবেদন করলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে তা করতে হবে। তবে রিভিউতে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। কারণ, যে সকল বিচারপতিরা রায় দেন, তারাইতো আবার রিভিউ আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন। সে কারণে প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে রায়ে যদি বড় ধরনের খুঁত থাকে, সে ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।

সোনারগাঁও হোটেলের পাশে রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে সরকারের অধিগ্রহণ করা প্রায় ৬ দশমিক ২১ একর জমিটি ১৯৯৮ সালে কেবলমাত্র একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে দেয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এরপর থেকে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে।
 
শুরু থেকেই রাজউক বলে আসছিলো, ভবনের নকশা সঠিকভাবে করা হয়নি। এ ভবনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও।
 
হাইকোর্টের রায়ে যা ছিলো
৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙার পর নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে ব্যবহারে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা ফেরত দিতেও বলেন আদালত।

আদালত রায়ে বলেন, ‘বিজিএমইএ’র সদস্যরা দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছেন, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকরাও তেমনি অবদান রাখছেন। যাদের শ্রমের জন্যই গার্মেন্টস কারখানা চলছে। হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালিরাও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রাখছেন। দরিদ্র কৃষকদের অবদানও কোনো অবস্থাতেই খাটো করার সুযোগ নেই। তাদের শ্রমের বিনিময়ে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে বলে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বেচে যাচ্ছে। তাদের উৎপন্ন দ্রব্য না থাকলে বিজিএমইএ’র সদস্যসহ গোটা দেশের জনগণকে উপোষ থাকতে হতো’।

হাইকোর্ট বলেন, ‘সুতরাং আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে একটি শক্তিশালী মহলকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এমন যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। দেশের অন্য দশজনের মতো এই আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী লোকেরাও দেশের সাধারণ আইনের আওতাধীন। সংবিধান অনুযায়ী ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো বৈষম্য চলতে পারে না’।

আদালত রায়ে বলেন, ‘ভবনটি সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে’।

আদালত বলেন, ‘বস্তুত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসাবে বিজিএমইএকে আইনের প্রতি আরও অধিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। অথচ তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার করেছেন’।

‘সুতরাং সরকার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ওপর নির্দেশ হলো, ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’।

আদালত বলেন, ‘বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে তাদের দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে। কারণ, তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল বেআইনি। কেননা, বিজিএমইএ’র ওই ভবন নির্মাণ বা ভবনের অংশ কারো কাছে বিক্রি করার কোনো অধিকার ছিল না। তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানতেন বা তাদের জানা উচিত ছিল যে, এই জমির ওপর বিজিএমইএ’র মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সুতরাং আদালতের মতে, তারা কোনো সুদ পাওয়ার দাবিদার নন’।    
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৯ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর

**
রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজিএমইএ
** বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের রায় বহাল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।