ঢাকা: কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমাতে সরকারকে চাপে ফেলতেই চিনি সরবরাহে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে দেশের অন্যতম প্রধান চিনি আমদানিকারক ও রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপ।
রমজান মাসে বাজারে চিনির চাহিদা তুঙ্গে থাকায় এই অপকৌশল হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি।
জানা গেছে, রোজা শুরুর আগে থেকেই শুল্ক কমাতে সরকারকে চাপে ফেলার এই প্রক্রিয়া হাতে নেয় দেশের চিনি আমদানিকারক ও রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ এবং আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দৈনিক যে পরিমাণ চিনি প্রয়োজন তার অতিরিক্ত চিনি বাজারে থাকলেও হঠাৎ করেই ২০ টাকা দাম বেড়ে খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার না থাকায় শুল্ক কমিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই উৎপাদিত চিনি বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। আর সরবরাহ কম থাকায় খরচ বেশি দেখিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি অর্থ আদায় করছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, চারটি কোম্পানি দেশের ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। কাঁচামাল আমদানি ও চিনি উৎপাদনে খরচ বেশি না হলেও মুনাফা বেশি রাখতেই উৎপাদিত চিনি বাজারে ছাড়ছে না তারা।
তারা জানান, প্রতিদিন চিনির চাহিদা ৫ থেকে ৬ হাজার টন। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টন। অথচ সিটি গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ কম হচ্ছে।
তবে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, সিটি, মেঘনা, দেশবন্ধু, আব্দুল মোনেম, এস আলম মিলে প্রতিদিন ৭ হাজার টন চিনি বাজারে ছাড়ছি। এতো চিনির চাহিদা তো দেশে নেই। তাহলে সেই চিনি কই যাচ্ছে!
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হাজি মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে চিনি সরবরাহ কম। সরবরাহ ঠিক থাকলে রাতারাতি চিনির দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়েনি, সরবরাহ ব্যয়ও বাড়েনি তেমনটি।
প্রকৃতপক্ষে চিনির দাম বাড়াতে এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনিতেই ‘র’ মেটিরিয়াল আমদানিতে শুল্ক আগেই বাড়ানো উচিত ছিল। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে তা না করা হলে দেশি চিনি বাজার হারাতো। অথচ শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিযোগিতামূলক বাজার নেই বলেই এই সুযোগে সরকারকে শুল্ক কমানোর জন্য চাপে রাখা হচ্ছে। রিফাইন চিনি আর ‘র’ মেটিরিয়াল আমদানিতে শুল্ক সমান করে দিলেই উৎপাদন পর্যায়ে বেশি খরচ দেখাতে পারবে না কোম্পানিগুলো।
পরিবেশকদের আরও অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে সংকট সৃষ্টি করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) গ্রহণের পরও মিলগেটে চিনি সরবরাহ করতে দেরি করছে। ডিও দেওয়ার পরও ২০ থেকে ২৫ দিন লাগিয়ে দিচ্ছে সরবরাহ কমের কারণ দেখিয়ে। আর সে কারণে দাম বেশি পড়ছে চিনিতে।
পরিবেশকরা জানান, সরবরাহ দেরির কারণে বাড়তি ট্রাকভাড়া ও ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৪ টাকায় বিক্রি করা হলেও অতিরিক্ত খরচসহ পাইকারি দাম পড়ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকায়। অথচ গত তিন সপ্তাহ আগে রমজান মাস শুরু আগে মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ছিল ৪৮ টাকা।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশে চিনির কোন সমস্যা নেই। মজুদ, উৎপাদন, পরিবহনেও সমস্যা নেই। সরবরাহও বেশি। চিনির দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
এসএমএ/আরআই