ঢাকা: নিউ সুপারমার্কেটের এস আমিন এন্টারপ্রাইজে খুচরা বিক্রির জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ১০০ কেজি চিনি। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিনি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন দোকানের মালিক আব্দুল মালেক।
পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও সিটি, ফ্রেশ, ইগলু ও দেশবন্ধুসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনি আমদানি ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা বিক্রেতা ও মুদি দোকানদাররা।
আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, আমার দোকানে প্রতিদিন দুই বস্তা (১০০ কেজি) চিনি দরকার। কিন্তু চাহিদা মতো চিনি পাচ্ছি না। সিটি ও মেঘনাওয়ালারা চিনি নিয়ে মাস্তানি শুরু করেছে। আমাদের চিনি দিচ্ছে না। একেক সময় একেক বাহানা শুরু করেছে। ’
পাইকারি চিনি বিক্রির অন্যতম বাজার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার। এখানে শুক্রবার ( জুন ২৪) প্রতি বস্তা চিনি ২ হাজার ৯৫০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজারেই প্রতিবস্তা চিনির দাম পড়ছে ৬০ টাকা। এই বাজারে চিনি নিয়ে আরও এক ধরনের কারসাজি তৈরি হয়েছে। বেশি দামে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে অথচ কোনো ক্যাশ মেমো দেয়া হচ্ছে না খুচরা বিক্রেতাদের।
অথচ গত বছর এপ্রিল মাসেও প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) চিনির দাম ছিল ১ হাজার ২৪০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৩ টাকা ২৩ পয়সা। বছরের ব্যবধানে শুধু পাইকারি বাজারেই দাম বেড়েছে ২৬ টাকা ৭৭ পয়সা।
আরও বাড়তি দামে চিনি বিক্রির আশায় সিটি ও মেঘনা গ্রুপ চিনি পাইকারি ও খুচরা বাজারে ছাড়ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পাইকারি ও খুচরা চিনি বিক্রেতারা।
এদিকে কিছুদিন আগে কয়েক মাসের ব্যবধানে চিনি আমদানিতে দ্বিতীয় দফা শুল্কারোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে গত ২২ ডিসেম্বর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে পূর্বের মজুদ থাকলেও বাজারে সংকট তৈরি করতে সরবরাহ কমিয়ে চিনির দাম বাড়াতে থাকে আমদানিকারকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি এক চিনি বিক্রেতা বাংলানউজকে বলেন, আমারাও চাহিদামতো চিনি পাচ্ছি না সিটি ও মেঘনা গ্রুপের কাছ থেকে। ইচ্ছে করেই ওরা বাজারে সংকট তৈরি করছে যাতে করে সামনে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করা যায়। ’
খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মূলত সিটি, ফ্রেশ, ইগলু ও দেশবন্ধু দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মেশিন নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে সরবরাহ হ্রাস করেছে। তবে কোম্পানিগুলোর এসব অজুহাত মানতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা। নিউ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওদের (সিটি ও মেঘনা গ্রুপ) চিনির কলের নাকি মেশিন নষ্ট। সবার মেশিন কি একই সঙ্গে নষ্ট। শুধু আমরা না সরকারও ওদের কাছে জিম্মি। ’
বাজারে চিনির সংকট প্রসঙ্গে নিউমার্কেটে সিটি গ্রুপের চিনির ডিস্ট্রিবিউটর হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সিটি গ্রুপের চিনির কলের মেশিন নষ্ট। তাই চিনি সাপ্লাই কম। ’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। গ্রীষ্ম ও রোজায় সিংহভাগ চিনি বিক্রি হয়। সরকারি মিলগুলো বছরে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টন চিনি উৎপাদন করে। তাই বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকেন দেশের ভোক্তারা। তবে এখন ৫০ কেজি চিনি আমদানি করতে খরচ পড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ প্রতি বস্তা (৫০) চিনিতে ১২’শ টাকা লাভ করছে কোম্পানিগুলো। এর পরেও আরও বাড়তি দামে বিক্রির আশায় চিনি জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব জনাব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওদের (সিটি ও মেঘনা গ্রুপ) কিছু একটা করতেই হবে। প্রচুর চিনি মজুদ আছে। রমজানে চিনি সংকট হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। অথচ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
এমআইএস/আরআই