ঢাকা: প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মেহেরপুরের গাংনীর বামুন্দি গো-হাট থেকে ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়ে আসা হয়েছে ২৩টি গরু। ১২ টনের ট্রাকটিতে মাল পরিবহনের জন্যে যে জায়গা রয়েছে সেটি লম্বায় আনুমানিক ১৫ ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ৭ ফুট।
১৫ ফুটের ট্রাকে ৪টি সারিতে ৫টি করে গরু রাখা হয়েছে। আর বাকি তিনটি গরুকে আড়াআড়ি করে দাঁড় করিয়ে রাখা। মোটা দড়ি দিয়ে সারিগুলোতে গরুকে এমনভাবে এক সঙ্গে বাঁধা হয়েছে, যেন নড়াচড়া করতে না পারে। দীর্ঘ পথের ঝাঁকিতে একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে দড়ির সঙ্গে ঘর্ষণে একটি গরুর চামড়া লাল হয়ে রয়েছে। আরো কয়েকটি গরুর চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতও দেখা যায়।
গাবতলী হাটের উত্তর দিকে গরু নামানো হয় ট্রাক থেকে। ঈদের আগ মুহূর্তে এখন প্রতি ঘণ্টাতেই কয়েকটি করে ট্রাক আসছে। জমজমাট হয়ে উঠছে গাবতলীর হাট।
বুধবার সকালে গাবতলী হাটে গরু পরিবহন এবং নামানোর ব্যবস্থায় অপরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনা ও অমানবিকতা চোখে পড়ে।
ট্রাকের ভেতরে চারপাশে খড় বেঁধে রাখা হলেও আদতে তা গরুর মুখে তোলা সম্ভব নয়। ট্রাক থেকে যে শহুরে রাখালরা গরু নামান তাদের কাছে গরুর সুস্থতা বা স্বাভাবিকতার চেয়ে দ্রুত টেনে হিঁচড়ে নামানোর প্রবণতাই বেশি।
একটি দড়িতেই বেঁধে রাখা হয়েছে ৫টি গরু। নামানোর সময়ও এই বাঁধন খোলা হয় না। ফলে একটি গরুকে নামানো হলে বাকি চারটিও একে ওপরের গায়ে পড়ে। এলোমেলোভাবে পাঁ ফসকে যাচ্ছে গরুগুলোর। নামানোর পরই আর সময় দেয়া হচ্ছে না। বরং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাটের দিকে। এরই মধ্যে দেখা যায় কুষ্টিয়া থেকে আনা একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে যায় ১ নং হাসিল ঘরের সামনে। একই দড়িতে বাঁধা অপর ৪টি গরু তাকিয়ে দেখতে থাকে এই পরিণতি। কিন্তু দড়িতে বাঁধা থাকার কারণে সরার কোন উপায় ছিলো না তাদের।
এভাবে কোরবানির গরু পরিবহনকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ পশু সম্পদ ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি ইন চার্জ (ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ফর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা) ডা. গিয়াসউদ্দিন।
তিনি বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে যেসব যানবাহনে গরু পরিবহন করা হয়, সেগুলোর কোনটাই এই কাজের জন্যে তৈরি হয়নি। যে ট্রাকে ১০টি গরু আনা সম্ভব, সেখানে ২০টি গরু বোঝাই করা হয়েছে। আর তাড়াহুড়োর কারণে দেখা যায়, ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতিতেও এলোপাতাড়ি গাড়ি চালান তারা।
তিনি বলেন, এভাবে গাড়ি চালানোর ফলে দড়িতে ঘষা খেয়ে চামড়া উঠে যায় এবং ক্ষত তৈরি হয় গরুর শরীরে। অথচ ৩০ বা ৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালালে এমনটি হতো না। এছাড়াও ট্রাকের ভেতরে বডিতে কলাগাছের খোল বা চট দিয়ে লোহার জায়গাগুলো মুড়িয়ে দিলে গরু ব্যথা পাবে কম। এছাড়াও সকল দড়ি চট দিয়ে মুড়িয়ে দিলে আর চামড়ার ঘষায় কষ্ট পায় না গরু।
ডা. গিয়াসউদ্দিন বলেন, গরুকে ট্রাকে ওঠানো এবং নামানোর কাজটি সাবধানে করতে হয়। একটি একটি করে নামানোর নিয়ম। নামানোর পর পর একটু পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হয়। এর ফলে গরুর ক্লান্তি কমে আসে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ পথে কিছুই খাওয়া হয় না গরুর। এছাড়াও নতুন স্থানে এসে ভয়ে ভয়ে থাকে। সেখানে যদি টানা-হ্যাঁচড়া করে নামানো হয়, সে আরো ঘাবড়ে যায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। আর অসুস্থ গরুর মূল্যও কমে যায় এবং কোরবানি দেয়া সম্ভব হয় না।
দূর-দূরান্ত থেকে গবাদি পশুকে হাঁটিয়ে না নেয়ার জন্যে সরকারি নিয়ম রয়েছে, তবে পশু পরিবহনের নীতিমালাও প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. গিয়াস উদ্দিন।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের ইসলাম বিভাগের সম্পাদক মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ কোরবানি একটি উচ্চমর্যাদার ইবাদত তাই এর পশু হতে হবে নিখুঁত। কোরবানির পশুকে কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়ার নির্দেশনা আছে হাদিসে। যেহেতু কোরবানির পশু মহান আল্লাহর শাহি দরবারে পেশ করা হয়, তাই পশুকে কষ্ট না দিয়ে যথাসাধ্য ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে। পশুটির প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
এমএন/জেডএম