ঢাকা: কোরবানির পশুর চামড়ার দর নিয়ে ব্যবসায়ীদের টালবাহানায় বৈশ্বিক মাফিয়াদের ছায়া দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতালিভিত্তিক এ চক্রটি কোরবানি এলেই চামড়ার বিশ্ববাজার অস্থির করতে তৎপরতা চালায়।
ফলে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম পড়ে যায়। এসব চামড়া তখন সস্তায় রফতানিকারকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করে তারা।
দেশের চামড়া শিল্পের সুরক্ষায় মন্ত্রণালয় তাই চামড়া রফতানিকে নিরুৎসাহিত করে ‘ক্রাস্ট ও ফিনিশড’ লেদার রফতানিকে উৎসাহিত করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৈশ্বিক এ মাফিয়া চক্রে বাংলাদেশেরও কয়েকজন ট্যানারি মালিক এবং চামড়া ব্যবসায়ীর অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। চক্রটি কোরবানির ঈদ এলেই নানা অজুহাতে চামড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে কম নির্ধারণের তোড়জোড় শুরু করে। কেউ কেউ আবার দেশে দাম কম রেখে পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া পাচারে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আসন্ন কোরবানির মৌসুম উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন চামড়ার অতিরিক্ত কম দর নির্ধারণ করে তা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহীন আহমদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের কাছে দর প্রস্তাব জমা দেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা গ্রহণ না করে গ্রহণযোগ্য দর নির্ধারণের কথা বলেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এরপর সিনিয়র সচিবকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলটি দেখা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের নতুন দর ঠিক করে শুক্রবারের (০৯ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ঘোষণার নির্দেশ দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ীদেরকে গত মৌসুমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দর ঠিক করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা যায়, দর গতবারের মতোই থাকছে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই একটি বৈশ্বিক চক্র বিশ্বব্যাপী চামড়ার দাম কমানোর ছক আঁকে। এ চক্রের খেয়ালিপনায় গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কমছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী ‘ক্রাস্ট ও ফিনিশড’ লেদারের দাম বাড়ছে। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর ‘ক্রাস্ট ও ফিনিশড’ লেদার রফতানি বাড়ার সূচক অকল্পনীয়ভাবে ঊর্ধ্বমুখী।
কাঁচা চামড়ার দর কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আরব দেশগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই এবং মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে প্রতি বছর পশু কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এতে বিশ্বের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি চামড়া এই একদিনেই সংগ্রহ করা যায়। আর্ন্তজাতিক মাফিয়ারা এ সুযোগটি গ্রহণ করছে।
এবার চামড়ার দর গত বছরের মতো থাকছে বলেও জানান তিনি। সচিব বলেন, দরে গত বছরের চেয়ে খুব বেশি নড়-চড় হবে না বলেই ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। গত বছর দর ৫০ টাকা বর্গফুট থাকলে এবারও তাই রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কাঁচা চামড়া রফতানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা গতবারের চেয়ে দর কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় আমাদের গত বছরের দরই রাখার কথা বলেছে। আমরা সন্ধ্যায় আবার নিজেরা বসে দর নির্ধারণ করে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবো’।
গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর নির্ধারণ করেছিলেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে এর দর ছিল ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা।
প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দর ছিল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। খাসির চামড়ার দর ছিল ২০ টাকা থেকে ২২ টাকা। আর বকরি ও ভেড়ার চামড়ার দর ছিল ১৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা।
২০১৪ সালে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতিফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে এ দর ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দর ছিল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, খাসির চামড়া ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা ও বকরির চামড়ার দর ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
২০১৩ সালে দর ছিল আরো বেশি। তখন ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ছিল ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা। ঢাকার বাইরে এর দর ছিল ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
আরএম/এএসআর