ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভুত কার্যকলাপের সত্যতা পেয়েছে সংসদীয় কমিটি। ব্যাংকটির ৬৮০ কোটি ৩১ লাখ ৩ হাজার ১৮৭ টাকার অডিট আপত্তি পাওয়া গেছে।
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জামানত ছাড়াই ভুয়া এলসি খোলার সুযোগ করে দেন ব্যাংকটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ফলে সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব চিত্র উঠে আসে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংক বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া এলসি বা জামানত ছাড়াই এলসি খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। এ রকম ২৪টি অডিট আপত্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সহায়ক জামানত ছাড়াই অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির জন্য বারবার ক্যাশ এলসি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে ব্যাংকটি। এতে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে মেসার্স রহমান হক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের দায় দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৯ টাকা।
একাধিকবার পুন:তফসিলিকরণ ও অনিয়মিতভাবে কস্ট অব ফান্ড কভার না করে সুদ মওকুফসহ পুন:তফসিলিকরণের পরও ঋণের দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৬০ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৮ কিস্তিতে ২৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।
প্রকল্প ও সিসি হাইপো ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পুন: তফসিলিকরণ এবং আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৪৮ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকা।
অর্জিত সুদবিহীন স্থিত বা ব্লকড হিসাবে প্রদর্শনের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও তা করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৫ টাকা।
জামানত বা প্যারিপাসু চার্জ গ্রহণ না করে মেসার্স এস কে জুট মিলস লি.কে সিসি হাইপো ও প্লেজ ঋণ বিতরণ এবং সুদ মওকুফ ও পুন:তফসিলিকরণের দীর্ঘদিন পরেও খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় ক্ষতি ২০ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ টাকা। প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে পুন:তফসিলিকরণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পরও সময় বৃদ্ধি করায় ক্ষতি ১৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
পুন:তফসিলিকরণ করার পরও মেসার্স মাহী ফিশ প্রসেসিং লি. এর সিসি প্লেজ ও হাইপো এবং ডিমান্ড লোনের দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতি ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ আদায় বাবদ ক্ষতি ১৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৮২ টাকা।
কোনো রকম জামানত ছাড়াই মেসার্স ওয়ানটেল কমিউনিকেশন লি. প্রকল্প ঋণ বিতরণ এবং প্রকল্পের বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন না করায় ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৫৫ টাকা।
এ রকম ২৪টি অনুচ্ছেদে নিয়ম বর্হিভুত কাজের সত্যতা পেয়েছে বাংলাদেশ অডিট অধিদফতর। এসব অডিট আপত্তির রিপোর্ট গত ২৯ আগস্ট সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের অডিট আপত্তি থাকায় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে দ্রুত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া হয়।
কমিটির সভাপতি ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, মো. আব্দুস শহীদ, মো. শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দীন খান বাদল এবং রেবেকা মমিন অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
এসএম/এএসআর