রংপুর: রংপুর অঞ্চলে আগাম জাতের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
এক সময় ছিল যখন এ অঞ্চলে কাজ না থাকায় ও কোনো ধরনের ফসল উৎপাদিত না হওয়ায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা দেখা দিত। সেসব কষ্ট দূর হয়েছে, এখন আর মঙ্গা হয় না এ অঞ্চলে।
আশ্বিন মাসের শুরুতেই আগাম জাতের আমন ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। আর সময়মতো আবাদ করা আমন ধান কাটা হবে আগ্রহায়ণ মাসে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে আগাম জাতের আমন ধান বিনা-৭, ব্রি-ধান-৩৩, ব্রি-ধান ৩৯, ব্রি ধান-৫৭, ব্রি ধান-৬২ ইত্যাদি জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
রংপুর জেলায় ১৬ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে, নীলফামারীতে ৭৭৮৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৫৫১৬ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৪৯৪৮ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৬১৭৫ হেক্টর, দিনাজপুরে ৬৭৭৩ হেক্টর, পঞ্চগড়ে ৪৭৫০ হেক্টর, ঠাকুরগাঁয়ে ৮৮৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। আগাম জাতের আমন ধানের রোপণ কাল ১২০-১২২ দিন।
রংপুর জেলার লাহিড়ির হাটের কৃষক রণজিৎ বিশ্বাস জানান, ৫ একর জমিতে আগাম জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন তিনি। এখন ধান কাটছেন। প্রতি একরে ফলন পাচ্ছেন ৭০-৮০ মণ (৬০ এর মণে)।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষক সাজু মিয়া বলেন, আগাম জাতের আমন ধান কাটছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আগে এ অঞ্চলে এ সময়টাতে মঙ্গা বিরাজ করতো এখন আর সেদিন নেই। আগাম জাতের আমন ধান চাষে আমাদের সে দুঃখ লাঘব হয়েছে। এখন প্রত্যেকের ঘরেই এ সময়টাতে ধান পাওয়া যাবে।
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউপির দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম সরকার জানান, সন্তান ও স্ত্রীসহ আমার সংসারে সদস্য সংখ্যা ১২ জন। আগে এ সময়টাতে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়তো। আগাম জাতের আমন ধান চাষ করে বর্তমানে সেই কষ্ট দূর হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেজবাউর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গা কবলিত এ অঞ্চলে আগাম জাতের আমন ধানের চাষ হওয়াতে প্রতিটি বাড়িতেই এখন ধান পাওয়া যাবে। ধানের পর কৃষকরা আগাম জাতের আলু, সরিষা ও শাক-সবজি চাষ করবেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, আগাম জাতের আমন ধান চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। এ অঞ্চলে এখন আর মঙ্গা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক শ ম আশরাফ বাংলানিউজকে জানান, এ অঞ্চলে এখন আগাম জাতের আমন চাষে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন। আরও নতুন নতুন ধানের জাত আসছে। সেই ধানগুলো রোপণের ১০০ দিনের মধ্যেই কাটা যাবে। এছাড়া ধানগুলোও হবে পুষ্টি সমৃদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে এখন আর মঙ্গা নেই। এ ধান চাষে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
এসআরআর/বিএসকে/আরএ