ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভারিত সম্পদের তুলনায় মূলধনের অনুপাত (সিআরএআর) কাঙ্খিত হারে না থাকায় পুরো ব্যাংক খাতের সিআরএআর কমে যাচ্ছে। দুর্বল দেখাচ্ছে গোটা ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য।
আবার রাষ্ট্রায়াত্ত এ ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বছরের পর বছর করের টাকায় মূলধন পুনর্ভরণ করছে সরকার। এক্ষেত্রে মূলধন পুনর্ভরনের বিকল্প উপায় অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলধন পুনর্ভরণ না করেও বিকল্প উপায়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকারি ব্যাংকগুলো। তাছাড়া মূল কাজের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বেশ কিছু সেবামূলক কাজ করতে গিয়ে এ খাতের ব্যাংকগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
ব্যাংকগুলো যদি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে ওই কাজগুলো করে, তাহলে মূল ধারার ব্যাংকিংয়ে বেশি নজর দিতে পারবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সম্মেলনকক্ষে ‘ব্যাসেল-৩: বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা খেলাপি ঋণ বাড়াকেই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। আর খেলাপি ঋণ বাড়ার মূলে রয়েছে সঠিকভাবে ঝুঁকি পর্যালোচনা না করা।
বক্তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ ঝুঁকি নীতিমালার অপব্যবহারের অভিযোগও তোলেন ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে।
বিআইবিএম আয়োজিত বৈঠকে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিং নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলোচকরা। তারা বলেন, ক্রেডিট রেটিং যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন? তাদের ধারণা, অর্থের বিনিময়ে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণমাণ ভালো দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র একে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার অধ্যাপক এসএ চৌধুরী। আলোচনার বিষয়ের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যনার্জী।
উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সাল শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভারিত সম্পদের তুলনায় মূলধন অনুপাত (সিআরএআর) ১০.৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ৬.৩৫ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ঋণাত্মক ৩১.৯৫ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ১২.৩৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর সিআরএআর সবচেয়ে বেশি ২৫.৬০ শতাংশ। ২০১০ সালে ব্যাংক খাতের গড় সিআরএআর ছিলো ৯.৯১ শতাংশ।
আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ব্যাংকিং সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ব্যাসেল কমিটির ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকের ঝুঁকিভারিত সম্পদের ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে।
সুইজারল্যান্ডের ‘ব্যাসেল’ এলাকায় ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের (বিআইএস) সদর দফতর অবস্থিত। এলাকার নামানুসারে ব্যাংক খাতের আন্তর্জাতিক বিধানকে ব্যাসেল নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে ব্যাসেল-১ নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে চলছে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের কাজ।
এস এ চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৪৫টি সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার কাজে জড়িত। এ কাজগুলো তারা অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। অথবা একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে সেই কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারে। এর ফলে তারা মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী হতে পারবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘৫০০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণগুলো পুনর্গঠন করার সুযোগ দেওয়া অযৌক্তিক নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের ‘বেইল-আউট’ কর্মসূচি আছে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন, এই ঋণগুলো আর পুনর্গঠন বা পুনঃতফসিল করতে না হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এসই/এএসআর