আদমদীঘির শাঁওইল গ্রাম থেকে ফিরে: গ্রামগঞ্জে বসে বিভিন্ন ধরনের হাট। এসব হাট থেকেই গ্রামবাসী তাদের নিজেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য সংগ্রহ করেন।
এখানে বিক্রি হয় রঙবেরঙের বাহারি ডিজাইনের কম্বল। এ হাট বসে সপ্তাহের রোববার ও বুধবার। হাটে বিক্রি শুরু হয় রাত তিনটায়, হাট চলে সকাল দশটা পর্যন্ত। এ হাটে তাঁতের তৈরির কম্বল ছাড়াও চাদর, তোয়ালে, গামছা, কাঁথা-লেপ-তোষকের কভার ও উলের সুতা বিক্রি হয়। প্রতি বছরের শীতের চারমাস এখানে সবচেয়ে বেশি কম্বল বিক্রি হয়। এ সময় প্রত্যেক হাটবারে তিন কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার কম্বল বেচাকেনা হয়ে থাকে।
এছাড়া বছরের অন্য সময়গুলোতে হাটে দিনে গড়ে ৫০ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি হয়। বছরের অন্যান্য সময় বিক্রির শীর্ষে থাকে সুতা।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের কম্বল গ্রামের হাট খ্যাত শাঁওইল হাটের ছোট-বড় একাধিক ব্যবসায়ী ও তাঁত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
তাঁতিপল্লীর লোকজন তাদের তৈরি পণ্যের পসরা সাজিয়ে জেঁকে বসেন এই হাটে। হাটের বিভিন্ন জায়গায় পলিথিন অথবা চট পেতে তার ওপর থরে থরে রেখে সাজানো হয় কম্বলসহ অন্যান্য পণ্য। অনেকেই পণ্যগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যা করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন পাইকারদের জন্য।
হাটে ব্লেজার কম্বল ও চাদর গাইট বেঁধে সাজানো থাকে সবচাইতে বেশি। তবে উলের সুতায় তৈরি কম্বলগুলো একটির ওপর আরেকটি ভাঁজ করে রাখা হয়। ক্রেতা সাধারণের দেখার সুবিধার্থে বিক্রেতারা এ কাজটি করেন।
হাটের পুরো সময়টা মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে হাট এলাকা। এছাড়া পণ্য আনা নেওয়ার জন্য ট্রাক, ভটভটি ও ভ্যান চলাচলে হাট এলাকায় যানজট থাকে কিছুটা।
দূর-দূরান্তের পাইকাররা আগের রাতেই এ হাটের উদ্দেশে রওনা হন। মধ্যরাতের আগেই এসে তারা হাটে উপস্থিত হন। মাত্র ৭ ঘণ্টার এ হাটে কয়েক কোটি টাকার মালামাল বিক্রি হয়।
নশরৎপুর ইউনিয়ন তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭৯-৮০ সালের আগ পর্যন্ত সান্তাহার শহরে কম্বলের এ হাট বসতো। পরবর্তীতে শাঁওইল এলাকায় হাট বসা শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, তৎকালীন সময়ে মাত্র ৪২ শতক জায়গার ওপর হাট বসা শুরু হয়। আজও হাটের জায়গা বাড়েনি। তেমন একটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাটে আসা পাইকারদের থাকার কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি হাট এলাকায়। তবে এ দীর্ঘ সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। শাঁওইলের কম্বলসহ তৈরি করা বস্ত্র অত্যন্ত মানসম্পন্ন। এখানকার তৈরি করা কম্বল দেশে অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। তাই সুযোগ সুবিধা না থাকার পরও দূর-দূরান্তের পাইকাররা কম্বল কিনতে এ হাটে আসেন।
এ হাটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পাইকাররা হাটে আসেন বলেও জানান সমিতির এই নেতা।
ইয়াসিন আলী, আবুল হোসেন, আনছার আলী সেখসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এ হাট ঘিরে ছোট-বড় ১ হাজার ৫শ’র মতো ব্যবসায়ী রয়েছে। হাটের জায়গায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রবেশ পথের দুইধারে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া গ্রামের ভেতরে কারখানার পাশাপাশি অনেক দোকান আছে।
ঢাকার বাবুরহাট থেকে আসা পাইকার মাজু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তিনি তিন লাখ টাকার বিভিন্ন ডিজাইনের কম্বল ক্রয় করেছেন। কম্বলগুলো মানসম্পন্ন। সে তুলনায় দামেও সস্তা। ২৫০-৫০০ টাকার মধ্যে এসব কম্বল সংগ্রহ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআইএস/এমজেএফ
** কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে তাঁত পল্লীর মানুষের