ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিনিয়োগ চাইলেন হাসিনা, বিনিয়োগ হবে বললেন ওবরান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
বিনিয়োগ চাইলেন হাসিনা, বিনিয়োগ হবে বললেন ওবরান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আমাদের মাঝে আজ খুবই ব্যতিক্রমী এক অতিথি এসেছেন, বিশ্বে আমরা খুব কমই পাই এমন সহসী নারী নেতৃত্ব, আমি মনে করি তিনিই বিশ্বের আজ সবচেয়ে সাহসী নারী। এই নারী ও তার পরিবার তাদের দেশের জন্য সব কিছু করেছেন, ঠিক এভাবেই তার বক্তৃতা শুরু করেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওবরান।

বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি) থেকে: আমাদের মাঝে আজ খুবই ব্যতিক্রমী এক অতিথি এসেছেন, বিশ্বে আমরা খুব কমই পাই এমন সহসী নারী নেতৃত্ব, আমি মনে করি তিনিই বিশ্বের আজ সবচেয়ে সাহসী নারী। এই নারী ও তার পরিবার তাদের দেশের জন্য সব কিছু করেছেন, ঠিক এভাবেই তার বক্তৃতা শুরু করেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওবরান।

আর শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা দিতে মঞ্চে আসেন তখন বিনয়াবনত হয়েই বলেন, আপনি উদার, তাই প্রশংসায় যে উদারতা দেখিয়েছেন আমি তাতে ধন্য। নেতৃদ্বয়ের এই পরস্পর পরস্পেরর প্রতি শ্রদ্ধা মুগ্ধ করেছে দর্শককে। সে সারিতে ছিলেন হাঙ্গেরির বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আর ছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও। বাংলাদেশ হাঙ্গেরি বিজনেস ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন দুই প্রধানমন্ত্রী।  

ওবরান বলেন, বিশ্বে আজ অনেক কিছুই পরিবর্তিত। সারা বিশ্বেরই কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে। হাঙ্গেরিতেই পাল্টে গেছে অনেক কিছু। আর বিশ্বের নেতারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছে আরেকটি দেশের পরিবর্তন সেটি বাংলাদেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে অব্যাহত উন্নয়ন ঘটছে। ৭ শতাংশ যার প্রবৃদ্ধির হার। বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা আজ বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো দেশটির এই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে।  

হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাঙ্গেরির কম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, শিক্ষাসহ যেসব খাতে আমাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, প্রযুক্তি রয়েছে সেসব খাতে বাংলাদেশকে আমরা সহায়তা করতে পারি। দুই দেশের সরকার পর্যায়ে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তার মাধ্যমে এই সহায়তা বাড়ানো যেতে পারে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতার শুরুতেই হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তৃতায় তুলে ধরা কথাগুলো জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশে ভিক্টর ওবরানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আশা করি শিগগিরই আপনাকে দেশে স্বাগত জানাতে পারবো।  প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে হাঙ্গেরি ছিলো প্রথম কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের একটি। তিনি আরো জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও হাঙ্গেরি থেকে নানাভাবে রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ। তার এই দ্বি-পাক্ষিক সফরের মধ্য হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো বিস্তৃত আঙ্গিকে শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।  

হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের ম্যারিয়ট হোটেলে এর আগে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে এই ফোরাম বিজনেস ফোরামের আলোচনা সম্পন্ন হয়। এটি ছিলো বাংলাদেশ-হাঙ্গেরি বিজনেস ফোরামের প্রথম বৈঠক। দুই নেতার সমাপনী বক্তৃতার আগে শেখ হাসিনা ও ভিক্টর ওবরানের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে একটি ব্যবসায়িক সহযোগিতামূলক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এফবিসিসিআই'র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এতে সই করেন। হাঙ্গেরির পক্ষে সই করেন এর  চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি ড. লাজলো পারাহ।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখেন হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর। এছাড়া বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন।  

এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আর কোনো তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা পালনের কথা বলেন তিনি। এফবিসিসিআই'র বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন মাতলুব আহমাদ।  

মঙ্গলবার সকালে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে তার দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার বলেন, অন্তন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক আমরা সম্পন্ন করেছি। আমরা এই সম্পর্ক আরো বিস্তৃত করার লক্ষে একমত হয়েছি। আর তা হবে দুই পক্ষ থেকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে।

দুই দেশের ব্যবসায়ী ফোরামের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি দুই পক্ষের জন্য নতুন নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

বাংলাদেশের ব্যবসা ও কৃষিখাতে যে অগ্রগতি হচ্ছে তা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে আটটি শতভাগ রপ্তানিবান্ধব রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন (ইপিজেড), দেশের বিভিন্ন অংশে বর্তমানে ১০০টি ইপিজেড তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে চীন, ভারত ও জাপানকে এরই মধ্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।  

তৈরি পোশাক, ওষুধ তৈরি, জাহাজ নির্মাণ, আইসিটি খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরে শেখ হাসিনা তাদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি জানান, এই খাতগুলো ছাড়াও চামড়া শিল্প, জুতা, পাট, সিরামিক, পেট্রোক্যামিকেল, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্ল্যাস্টিক সামগ্রি, বিদু্যৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণসহ অন্যান্য অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পে বিনিয়োগ সম্ভব।   

২০২১ সালের মধ্যে একটি ডিজিটালাইড, মেধাভিত্তিক মধ্য আয়ের দেশ গঠন আর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভিশনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী মহল আমাদের সঙ্গে বিনিয়োগের অংশিদারীত্ব নিয়ে এগিয়ে এলে এ লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। তিনি বলেন, আমরা এক সঙ্গে কাজ করলে দুই দেশেরই কোটি কোটি মানুষের জীবন মান পাল্টে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএমকে
 


**হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই

***পার্লামেন্ট স্কয়ারে সর্বোচ্চ সম্মান, হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা
** হাঙ্গেরির স্বাধীনতার বীরদের প্রতি হাসিনার শ্রদ্ধা
***দানিয়ুবের বুকে এক অপরূপ রাতের গল্প
***বুদাপেস্ট পৌঁছালেন প্রধানমন্ত্রী, ৪ ঘণ্টা বিলম্ব
***বুদাপেস্টের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী
***রোববার সকালে বুদাপেস্ট যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
***প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে হাঙ্গেরি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।