ঢাকা: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসাবে কাজ করতে পারছে না মন্তব্য করে প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য এ ব্যাংকের পথচলা সহজ করতে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব প্রস্তাব দেন তিনি।
মসিউর রহমান বলেন, ‘তারা একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসাবে কাজ করতে পারছে না। সিএসআর, ডোনেট দিচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সিএসআর দেওয়া যুক্তিহীন। যেখানে শ্রমিকরা নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন, তাদের বলছি, তোমরা সিএসআর-এ দাও!’
‘পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কাজ করতে পারবে না, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব চাপানো হলো কেন?’
প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য বিশেষজ্ঞ দিয়ে ব্যাংকটির পরীক্ষা করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি করা, সেটি করার ক্ষমতা রাখে কি-না এবং ভবিষ্যতে করতে পারবে কি-না, সেটিও দেখতে হবে’।
ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য তিনটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘ট্রাস্ট ব্যাংককে যদি মডেল হিসাবে ধরি, তাহলে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসাবে কাজ করতে দেওয়া যাবে। ট্রাস্ট ব্যাংকের মডেল বিবেচনা করতে পারি’।
দ্বিতীয় প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে সরকারি হিসাবে যে টাকা আসে, তা সরাসরি সরকারের তহবিলে যায় না। ব্যাংক না করে কল্যাণ বোর্ডের আদলে যারা বিদেশে যান, তাদের কল্যাণে ব্যয় করা যায়। তাহলে ব্যাংকের দায়-দায়িত্ব এর ওপরে পড়ে না। যেমনটি রয়েছে সচিবালয় কর্মচারীদের জন্য কল্যাণ বোর্ডে’।
‘প্রবাস থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে বন্ড বিক্রি করে ওই টাকা সরকারের অবকাঠামোর খাতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ব্যয় করতে পারে’ বলে তৃতীয় প্রস্তাব দেন ড. মসিউর।
তিনি বলেন, ‘এর সুবিধা হলো টাকা নষ্ট হবে না। অবকাঠামো থেকে টোল আদায় করা হলে তারা (ব্যাংকটি) নির্দিষ্ট হারে অর্থ পাবে। ফলে টাকা হারানোর মতো ঝুঁকি থাকবে না’।
২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিদেশে থাকার সময় কিছু জমি-জমা কেনে, কিছু পাসপোর্ট নবায়নে অর্থ ব্যয় করে। ব্যাংকের সফলতা খুব একটা উজ্জ্বল নয়। দেখা যায়, মোট সম্পদের ওপর রিটার্ন কম। যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এদের এতো কম আয় ও মুনাফা কেন?’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিক যারা আছেন, তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তাদের পেছনে সরকারের তেমন ব্যয় নাই। তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। এজন্য মনে করি, সরকারের মনে হয় এদিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এজন্য চিরাচরিতভাবে করলে হবে না। অভিনবভাবে করলে ঝুঁকি থাকে, সে ঝুঁকিটা নিতে হবে। এতে বিদেশ যাওয়া-আসা সহজ হলে আরও আকৃষ্ট হবেন শ্রমিকরা’।
প্রবাসীদের ২০১৩-২০১৪ সালের সমীক্ষার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যায়, ২ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করেন না তারা। বেশির ভাগ যায় ভোগের জন্য, কিছু বিয়ে, উপঢৌকনের জন্য। আশা করি, যেন তাদের বেশিরভাগ বিনিয়োগের মধ্যে যায়’।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব শামছুন নাহার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক করতে হলে আরও তিনশ’ কোটি টাকার দরকার বলে জানান। তিনি বলেন, এতে অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন স্কিম গ্রহণ করা যাবে।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর বলেন, ‘রেমিটেন্সের পরিমাণ কমছে বলে যে তথ্য আসছে, আমি মনে করি, ইনফরমাল ওয়েতে টাকা আসছে’।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীকরণে অভিবাসীদের অবদান’ শীর্ষক ছায়া সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে এটি এবং রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিতর্কে স্পিকার হিসাবে ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদে চৌধুরী কিরণ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বোয়েসেল।
যুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ মক পার্লামেন্ট বিতর্কে সরকারি দল হিসাবে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজি পরাজিত করে বিরোধী দল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর