ঢাকা: শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গত ১২ দিন ধরে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে আশুলিয়ার পোশাক শিল্পএলাকায়। বন্ধ রয়েছে উৎপাদন।
বিজিএমইএ থেকে জানা যায়, একটি কারখানা বন্ধ থাকা মানেই শুধু উৎপাদন বন্ধ থাকা নয়, তার সাথে থেকে যায় আনুষঙ্গিক আরো নানা ক্ষতির আশঙ্কা। কারখানা বন্ধ থাকার ফলে অর্ডার সময় মতো সাপ্লাই দেয়ার বিষয়ে তৈরি হয় সংশয়। তৈরি হতে পারে স্টক লট। অনেক পণ্য পাঠাতে হবে আকাশপথে যাতে খরচ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এমন আরো নানান আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং শ্রমিক অসন্তোষ শেষ হলেও ক্ষতির হিসাব বাড়তে থাকবে।
শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বন্ধ হয়ে আছে ৫৫টি কারখানা। ১১ ডিসেম্বর থেকে চলমান শ্রমিক অসন্তোষে বন্ধ হয়ে গেছে এনভয় গ্রুপের তিনটি কারখানা। তাই নানা শঙ্কায় রয়েছে কারখানার মালিকপক্ষ।
এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলানিউজকে বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আমাদের জিম্মি বানিয়ে বারবার হুমকি দেয়া হয়। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। তাই কোনো উপায় না পেয়ে আমরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এর ফলে আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ আমাদের কিছুই করার নেই। এখনো যদি শ্রমিকরা এসে কাজ করতে চান তাহলে আমরা কারখানা খুলে দেব। কারণ কারখানা বন্ধ রেখে আমাদের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির জানান, এরই মধ্যে বন্ধ কারখানাগুলোর মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সামনে কোনো পথ খোলা না পেয়েই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আমাদের গড়ে প্রায় ৮০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। সে হিসাবে এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। সামনে আরো কতো আর্থিক ক্ষতি হবে তা এখনো বুঝে ওঠা মুশকিল। পরিস্থিতি যতোদিন ঠিক না হবে ততোদিন এই ক্ষতির হিসাব বাড়তেই থাকবে। ‘
তবে শ্রমিকরা চাইলে মালিকরা যে কোনো সময় কারখানা খুলে দিতে রাজি আছেন বলে জানান বিজিএমইএ’র এই সহ-সভাপতি।
অন্যদিকে মালিকদের আর্থিক ক্ষতির পাশিপাশি শ্রমিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানান আওয়াজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাজমা আকতার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কারখানা বন্ধ থাকার ফলে যে মালিকরাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তা নয়; বরং ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে শ্রমিকদেরও। কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন না। ফলে মজুরিটা তারা পাবেন কোথা থেকে? আমরা চেষ্টা করছি যাতে শ্রমিকরা কারখানায় নিজ দায়িত্বে ফিরে গিয়ে অোবার কাজ শুরু করেন। এই শিল্প শুধু মালিকদেরই নয়, শ্রমিকদেরও। তাই ক্ষতি হলে শুধু মালিকদের হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। ‘
মুজরি বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া না বাড়ানো, কারখানায় ছাঁটাই বন্ধসহ বেশ কিছু দাবিতে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়া এলাকায় শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০ ডিসেম্বর আশুলিয়ার বাইপাইলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই জরুরিভিত্তিতে বিজিএমইএ ৫৫ টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
ইউএম/জেএম