ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজের মুক্ত আলোচনা

বিকশিত বিকাশের গল্প

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
বিকশিত বিকাশের গল্প বিকাশের সিইও কামাল কাদির

এটি একটি বিকশিত বিকাশের গল্প। এই গল্পের পাত্র পাত্রী দেশের আড়াই কোটি মানুষ। যারা আজ তাদের আবেগ অনুভূতির অংশ করে নিয়েছে বিকাশকে। অর্থই যদি হয় জীবনকে অর্থবহ করে তোলার উৎস, তাহলে বিকাশ তাতে একটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।

মানুষের হাতে টাকাকে বিকাশ করে তুলেছে সবচেয়ে সহজলভ্য। প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধযুগ পেরিয়ে বিকাশ আজ পুরোপুরি বিকশিত।

বিকাশের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষই। বিকাশের প্রধান নির্বাহী, বিকাশ যার মস্তিষ্কপ্রসূত সেই কামাল কাদীর বিকাশকে তাই ব্যবসা হিসেবে দেখেন না, তিনি মনে করেন ‘এটি একটি সেবা’।

এটা মানুষের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়ার একটি পথ। স্রেফ প্যাশন থাকলেই এমন একটি সেবাকে সত্যি করে তোলা যায়। যা বিকাশ করতে পেরেছে, বলেন তিনি।

বিকাশ দেশের সেই সব মানুষকে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছে, যারা বরাবরই ছিলো বঞ্চিত, অবহেলিত কিংবা সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে।

বাংলানিউজের সঙ্গে রোববার (১ জানুয়ারি) বছরের প্রথম দিনে খোলামেলা আলোচনায় বসেছিলেন এই সফল উদ্যোক্তা। কেবল সফল বললে পুরোটা বলা হবে না, উদ্ভাবনী একটি মন ও মননশীলতা নিয়েই তার কর্পোরেট জগতে পদচারণা। যে কাজেই হাত দিয়েছেন সাফল্য পেয়েছেন।

কামাল কাদীর বলেন, স্রেফ ব্যবসাটাই সব কিছু নয়। আপনি যখন গণমানুষের সাথে কোনও ব্যবসায় নামবেন তখন আপনাকে তাদের আবেগ অনুভূতিকে মূল্য দিতে হবে। তখন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটবে যে আপনি নিজেও আবেগ তাড়িত হয়ে যাবেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বিকাশের সিইও কামাল কাদির
বলুন না দুয়েকটা আবেগে জড়ানো গল্প! অনুরোধ ছিলো বাংলানিউজের।

কামাল কাদীর বলেন, সব গল্পই আবেগের তবে একটির উল্লেখ করতে পারি যেটি বিকাশের নিজস্ব একজন কর্মীর ড্রাইভারের ঘটনা। ওই ড্রাইভারের মেয়ে মারা গেলে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। রওয়ানা করে যখন জানালেন তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বিকাশের অ্যাকাউন্ট আছে কি না? থাকলে সেখানে টাকা পাঠানো হবে। কিন্তু তার অ্যাকাউন্ট ছিলো না। এমন সময় যে ট্রাকে করে লাশ বহন করা হচ্ছিলো তার চালক বললেন, তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে। পরে সেই ট্রাক চালকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হলে তা পথে কোনও একটি এজেন্টের কাছ থেকে ক্যাশ করা হয়। আর তাতেই হাতে টাকা আসে। লাশ দাফনের কাজে আর কোনও ব্যাঘাত ঘটলো না।

এমন একটি ঘটনার পর কোন বিষয়টিকে বড় করে মনে হয়েছিলো চলতি পথের একজন গ্রাহককে টাকা পৌঁছাতে পারার সাফল্য নাকি একজন অসহায় বাবার হাতে টাকা পৌঁছানোর আবেগ? বাংলানিউজের এই প্রশ্নে কামাল কাদীরের উত্তর আমিও বাঙালি, রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।

আরেকটি গল্প বললেন কামাল কাদীর। সেবার সাধারণ পোশাকে একটি হাইওয়ের পাশে বিকাশ কেন্দ্রে বসে ছিলেন। (মাঝে মধ্যেই তিনি এটা করেন। সেবার মান, সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া নিজের চোখে দেখা ও বুঝে নেওয়ার জন্যই তা করেন) এমনই সময় একজন নারী গ্রাহক এলেন তার জন্য বিকাশে পাঠানো অর্থ নিতে। খুব সহজেই তা তুলেও নিলেন। ফেরার পথে তাকে ডেকে জানতে চাইলেন, চাচী বিকাশ ক্যামন? তিনি বললেন, ভালো। কেমন ভালো? জানতে চাইলেন কামাল কাদীর। উত্তরে নারীটি বললেন, ‘ভালো! তবে বেশি ভালো.. ভালো না!’

‘আমিতো রীতিমতো হতবাক!’ বাংলানিউজকে বলেন কামাল কাদীর। একটু এগিয়ে গিয়ে মধ্যবয়ষ্কাকে জানতে চাইলাম, কেনো বলছেন এ কথা। উত্তরে তিনি জানালেন, তার স্বামী ও ছেলে দুজনই ঢাকায় রিক্সা চালান। আগে তারা সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। এখন বিকাশে টাকা পাঠান। মাসেও একবার বাড়ি যান না।

এটাও আবেগকে নাড়া দেয়, বলেন কামাল কাদির। প্রযুক্তির এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কাছাকাছি যেমন আমরা আসতে পেরেছি, তেমনি অনেক বিচ্ছিন্নও হয়ে গেছি।

বাংলানিউজের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশনও তুলে ধরেন বিকাশের সিইও। এর মাধ্যমে তিনি জানান দেশের ৯৮ শতাংশ এলাকাই বিকাশের সেবার আওতায় এসে গেছে। যেখানেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করছে সেখানেই বিকাশ পৌঁছে গেছে আর প্রতি মাসেই বাড়ছে লাখ লাখ নতুন গ্রাহক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই পদ্ধতি মেনে চলছে সরকারের ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল বিধি-বিধান।

টাকা সঙ্গে বয়ে নেওয়ার ঝুঁকি থেকে দেশের মানুষ এখন মুক্ত। যেখানেই টাকার প্রশ্ন সেখানেই একটাই উচ্চারণ ‘ক্যানো বিকাশ আছে না’। ফলে বিকাশ একটি ‘ব্র্যান্ড নেম’-এ পরিণত হয়েছে।  
বাংলানিউজের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বিকাশের সিইও কামাল কাদির

বিকাশের মতো একটি সেবা কেনো প্রয়োজন? সে প্রশ্নের উত্তরেও একটা সহজ ব্যাখ্যা তুলে ধরলেন কামাল কাদীর। তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেবা তার বিশাল অবকাঠামোর জন্যই নিম্ন-আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। একেকটি গ্রাহক সেবার পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তার তুলনায় ওই সেবা থেকে অর্জিত আয় অনেক কম। ফলে দেশে এই অর্থসেবার জন্য এমন একটা কিছু প্রয়োজন ছিলো তার অবকাঠামোগত খরচ সামান্য, কিংবা অতি সামান্য। বিকাশই সেই সেবা। এর যখন শুরু ততক্ষণে দেশের সাধারণ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে কিংবা যাচ্ছে। আর মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সাথে সাথে বিকাশের গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এতে উভয় পক্ষই সুবিধাভোগী।

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতি আমাদের এই সেবাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পথে অনেক সুবিধা দিয়েছে। সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, বলেন কামাল কাদীর।

রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন স্বাধীনতা টাওয়ারে বিকাশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন এর সিইও কামাল কাদীর। সেখানে ড্যাটা সেন্টারে বড় একটি টিম কাজ করছে। সামনে সারিবদ্ধ মেগা স্ক্রিনে প্রতিটি নতুন নতুন তথ্য সংযুক্তির ডিসপ্লে দেখিয়ে তিনি বলেন, একটি ছোট্ট ট্রানজেকশন যেখানেই হোক তার তথ্য সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয় কম্পিউটার সিস্টেমে। আর তার সার্বিক চিত্র দেখা যায় এই মেগা স্ক্রিনে। চব্বিশ ঘণ্টা যার মনিটরিং চলে। ফলে কোথাও কোনও ব্যত্যয় ঘটলে তা দ্রুতই সমাধানের সুযোগ থাকে।

এছাড়াও রাজধানীর মহাখালী এলাকায় বিকাশের কল সেন্টার ও KYC (Know Your Customer) কেন্দ্র পরিদর্শন করে বাংলানিউজ। উভয় সেন্টারে কয়েক ডজন কর্মীকে টানা কাজ করতে দেখা যায়। কল সেন্টারে সকলেই সারাক্ষণ ক্লায়েন্টদের যে কোনও সমাধান দিচ্ছেন। আর কেওয়াসিতে সারাক্ষণই চলছে ডাটা এন্ট্রির কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি মেনেই এই কেওয়াইসি পরিচালিত হচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সকল নীতি-পদ্ধতি মেনে, সরকারের আইন বিধি নিষেধের মধ্যে থেকেই বিকাশ তার অর্থসেবা দিয়ে যাচ্ছে। যা এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি অতি প্রয়োজনীয় সেবায় পরিণত হয়েছে।

আসলে এখানে একটি জিনিষের প্রয়োজন তা হচ্ছে আত্ননিয়োজন। আর যে কাজটি আমরা করছি তাতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ আস্থা। বিকাশের সকল কর্মীর সে আস্থা রয়েছে, আর সেভাবেই আমরা এগিয়ে চলেছি, বলেন কামাল কাদীর।

বাংলাদেশ সময় ১৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।