এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ছয়টি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩টি বাজারে টেলিনর গ্রুপের আর্থসামাজিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
কেপিএমজি’র তৈরি করা এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিনরের আর্থসামাজিক প্রভাবের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশসহ এশিয়ার ভারত, মালয়শিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে টেলিনর।
প্রতিবেদনে চারটি মূল বিষয়ের উপর টেলিনরের প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও, বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে টেলিনরের প্রভাব, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিসহ অর্থনীতি বিস্তৃতির লক্ষ্যে টেলিনরের প্রভাব, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক সমতার উন্নয়ন, সাপ্লাই চেইনের টেকসই উন্নয়নে টেলিনরের প্রভাব এবং সঙ্কটময় অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব।
টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিগভে ব্রেক্কে বলেন, আমাদের বিশ্বাস, সংযুক্ত সমাজব্যবস্থা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে উন্নত কাঠামো তৈরি করা যায়। আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে বাস্তবায়ন করা এবং এ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনায় অবদান রাখা এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য।
গ্রামীণফোনের সিইও পেটার বি ফারবার্গ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে গ্রামীণফোনের কার্যক্রম যেভাবে প্রভাব ফেলছে তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবর্তনে মনযোগ দেওয়ায় আমরা আরো সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন প্রত্যাশা করছি। টেলিনর বাংলাদেশে তার পথচলা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতির উন্নয়নে একটি ভূমিকা রাখতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১ হাজার ৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূল্য সংযোজন করেছে টেলিনর, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোট মূল্য সংযোজনের ০.৮ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের ৩০.৮ শতাংশ।
অন্যদিকে এশিয়ার অর্থনীতিতে ৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ এবং উল্লেখিত ১৩টি বাজারে ২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ যোগান দিয়েছে টেলিনর। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে টেলিনরের প্রতিটি পূর্ণকালীন কর্মীর সরাসরি মূল্য সংযোজন ছিলো ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার, যা জাতীয়ভাবে একজন পূর্ণকালীন কর্মীর গড় উৎপাদনশীলতার ২৩ গুণ (৭ হাজার ৪৯২ মার্কিন ডলার)।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের পূর্ণকালীন বা তার অনুরূপ ৪ হাজার ৭২৮ জন কর্মী ছিল। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৭ শতাংশ নারী এবং ৯৯.৭ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া সাপ্লাই চেইনে পরোক্ষভাবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০টি চাকরি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১ লাখ ১৯ হাজার ১০০টি প্রবর্তিত চাকরির সূত্র তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টেলিনরের তৈরি করা প্রতিটি চাকরির বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে আরো ৬১টি চাকরির সুযোগ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত ৫ বছরে ১ হাজার ১৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে টেলিনর, যার মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৫-তে বিনিয়োগ করেছে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫-তে বিশ্বব্যাপী টেলিনরের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমান ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এশিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মূলধনী বিনিয়োগ ছিলো ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৪ সালে কর ও অন্যান্য সরকারি ফি বাবদ ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে গ্রামীণফোন। ২০১৫ সালে সরকারি কোষাগারে অবদান দাঁড়ায় ২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুই বছরে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের ৩.৪ শতাংশই গ্র্রামীণফোনের অবদান।
৫৬ মিলিয়নের বেশি গ্রাহক সংখ্যা নিয়ে গ্রামীণফোন ২০১১-২০১৫ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে। এটি ইতোপূর্বে উল্লেখিত মোট মূল্য সংযোজনের অতিরিক্ত।
২০১৫ সালে দেশজুড়ে গ্রামীণফোনের বিল পে সেবার মাধ্যমে সর্বমোট ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। দেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিনর ওই বছর ৮ হাজার ৪৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোবাইল আর্থিক সেবার লেনদেন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও, ২০১৬ সালে গ্রামীণফোন ক্ষুদ্রবীমা সেবা নির্ভয় লাইফ ইন্সুরেন্স সেবাগ্রহণে ক্ষেত্রে ৫.৭১ মিলিয়ন গ্রাহক যুক্ত করেছে।
বাংলাদেশে নারী গ্রাহকদের ডিজিটাল ক্ষেত্রে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধিতে অবদান রাখার মাধ্যমে গ্রামীণফোন ২০১১-২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপে’তে ৭ হাজার ৪৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে।
টেলিনরের সাপ্লাই চেইন সাসটেইনেবিলিটি নীতিমালার অধীনে বাংলাদেশে ১ হাজার ৬টি সরবরাহকারীদের মাধ্যমে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনে ২.১ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ