শনিবার (০৪ মার্চ) সিলেটে জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে এ গবেষক।
কয়েকজাতের ধানও আবিষ্কারের পাশাপাশি উৎপাদন করেছেন স্বাস্থ্য উপকারী সিনার্জিকোলা নামে একটি কোমলপানিয়।
ড. আবেদ বলেন, হার্ভাড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে সাদা চাল খাওয়ার কারণে মানব শরীরে রক্তে শর্করা বাড়ে। অথচ এমন একটি সময় ছিল, যখন মানুষ লাল চাল খেয়েছে। লাল চাল মানুষের স্বাস্থ উপযোগী ছিল।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে চালের আদি রং ছিল লাল। সমস্ত আউস ও আমনের চাল লাল ছিল। ষাটের দশকের পরে প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত লাল চালকে মিলিং করে সাদা করে খাওয়া শুরু হলো। চালের ওপর থেকে পুষ্টিগত বা উপকারী যে আঁশ, সেটা সরিয়ে ফেলা হলো। তখন থেকে ডায়বেটিস মহামারি দেখা দেয়। কিডনী রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
ড. আবেদের চাওয়া মানুষের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকুক। এ মানসিকতা থেকে উৎপাদন করেছেন নতুন জাতের এ ধান। যা কিনা সাদা চালের সঙ্গে ২০শতাংশ সংমিশ্রনের ঘটিয়ে রান্না করে খেলে শর্করা থাকবে না। মূলত প্রকৃতিভাবে ফসলে থাকা রং সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে চল্লিশের কোটায় পৌঁছার আগেই মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, এখন সমস্ত সাদা চালকে লাল করা যাবে না। তাই সাদা চালের সঙ্গে সুপার রাইস বা সোনালি চালের ২০ভাগ সংমিশ্রন ঘটিয়ে রান্না করলে শর্করা ভাত খেলেও বাড়বে না। সোনালি চাল মেশালেও সাদা রংই থেকে যাবে। এর দামও থাকবে সহনীয় পর্যায়ে।
তার চেয়েও উৎপাদিত কালো রংয়ের চাল আরও ভালো। অতিশয় লাল হওয়ার পর কালো হয়ে যাওয়া এ চাল রান্না করলে আবার সোনালি রংসহ বিভিন্ন রং ধারণ করবে। তবে কালো চাল এখন বাজারজাতকরণ করা যাবে না, কারণ এটা গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া কোনো ধরণের ক্যামিকেল ছাড়াই কালো জাতের চমেটো উৎপাদন করেছেন ড. আবেদ। এ টমেটোর রং স্ট্রীম ব্লু বা অতি বেগুনি। যেটা টমেটোতে দেখা যায় না। এটাও খুবই স্বাস্থ্য সম্মত।
ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, দেশের কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করিনি। তবে নিজের ধারণা, এমন একটা পদ্ধতি বের করবো, নিয়ম সৃষ্টি করবো, গ্রামের লোকজন সেখানে কাজ করবে এবং গবেষণার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করবে। মূলকথা গবেষণার কাজটা গ্রামের মাঠেই হবে।
ড. আবেদের মতে, আমরা সমস্ত কিছু গ্রামে করছি। সিলেটকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। গ্রামে কর্মসংস্থানের যোগাড় হবে। মানুষ কাজের জন্য শহরে আসে, এখন থেকে কাজের জন্য গ্রামে যাবে।
এবার সিলেট ফ্যাস্টিভ্যালে তার উৎপাদন নিয়ে আলোচনা হোক। এজন্য সেখানে অংশগ্রহণ থাকবে তার। কৃষিকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান করতে আগ্রহী এ গবেষক। ভবিষ্যতে এ কোম্পানির একটি অংশ দরিদ্রতা বিমোচনে কাজে লাগাবেন-এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের অঙ্গিকার নিয়ে তার নিজ গ্রাম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুরে ৮০ বিঘা জমিতে নতুন জাতের ধান ও কালো চমেটোসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন ড. আবেদ।
তার সঙ্গে এ প্রকল্পে কাজ করছেন সৈয়দ নূর আহমেদ সৌরভ, দেওয়ান গাজী সিরাজুল ইসলাম, আজওয়ার চৌধুরী, মেহেদী হাসান ও ফারহানা। সংবাদ সম্মেলনে তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এনইউ/ওএইচ/