ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনারসি বুননে ব্যস্ত কারিগর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
বেনারসি বুননে ব্যস্ত কারিগর বেনারসি বুননে ব্যস্ত কারিগর-ছবি: আরিফ জাহান

শেরপুর (বগুড়া) ঘুরে: ঘোলাগাড়ী কলোনি। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহর। এখানে থেকে ৪-৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে দেখা মিলবে এই কলোনির। যার আরেক নাম বেনারসি-পল্লী। বাইরের মানুষজনের কাছে ঘোলাগাড়ী কলোনি ‘বেনারসি পল্লী’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

শনিবার (১০ জুন) বেনারসি-পল্লী নামে খ্যাত ঘোলাগাড়ী কলোনিতে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে চলছে শাড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞ।

কারিগরের হাত-পায়ের তালে তালে চলছিল তাঁত।

সচল মেশিনে সুতোভর্তি কাঠ নিয়ে একহাত এপাশ-ওপাশে চালনা করছিলেন তাঁতী। সমানতালে চালাচ্ছিলেন পা। মেশিন সচল রাখতে গিয়ে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসছিল তাদের।

যতো ক্লান্তিই হোক, শরীর যতোই বিদ্রোহ করুক, মেশিন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ একদম নেই। সুযোগ নেই দম ফেলারও। বেনারসি বুননে ব্যস্ত কারিগর-ছবি: আরিফ জাহান বেনারসি-পল্লীতে সারাক্ষণ কেবল একটাই শব্দ –‘খটাশ-খটাশ’। নারীদের দেখা গেলো ঘূর্ণায়মান মেশিনে সূতো গোছাতে। পাশাপাশি ড্রাম মেশিনের সাহায্যে সুতা প্রসেসিং করছিলেন কয়েকজন পুরুষ-শ্রমিক।

এতোসব আয়োজন মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে। দরজায় কাড়া নাড়ার দিন ঘনিয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে ঘনিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেনারসি তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন কারিগররা।

তবে সমস্যার অন্ত নেই। তাঁত মেশিনের সাহায্যে এখানে উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত সাপোর্ট না থাকায় ফিনিশিংয়ের কাজ করতে হয় ঢাকায় গিয়ে। এজন্য যেতে হয় ঢাকার মিরপুর বেনারশি পল্লীতে। ফিনিশিংয়ের কাজ শেষে তারা নিজ গাঁয়ে ছুটে যান। এরপর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা বেনারসিসহ হরেক রকমের শাড়িগুলো বাজারজাত করেন ।

প্রত্যেক বাঙালি ললনাকে মানায় শাড়িতে। সেই শাড়ি যদি মানসম্পন্ন ও পছন্দের হয় তবে তো কথাই নেই। বেনারসিতে-পল্লীতে বেনারসি, বুটিক, জামদানি, টাইটাকি, কাতান, কাতান বুটিক, ব্রকেট, পাটি নামের বাহারি ডিজাইনের শাড়ি বানানো হয়। এসব বাহারি শাড়িতে ফুটে ওঠে

প্রতিটি বাঙালি ললনার প্রকৃত রূপ-মাধুরি। মাটির ওপর গড়ে তোলা হয় কারখানাগুলো। মাটি কেটে নির্দিষ্ট স্থানে চার কোণাকৃতির গর্ত তৈরি করা হয় প্রত্যেক কারখানার জন্য। গর্তে আসন গাড়েন কারিগরা। সেখানে বসেই মেশিন চালান তারা।

বাহারি ডিজাইনের ক্যাটালগ লাগানো হয় প্রত্যেক তাঁত মেশিনে। সামনে জালের মত বিছানো থাকে রঙ-বেরঙ-এর সুতা। কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এই সুতো একসময় হয়ে ওঠে একেকটি আকর্ষণীয় শাড়ি।

কারখানার মালিক আব্দুল ওয়াহেদ বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রথমে এই কলোনিতে শাড়ির বুননের কাজ শুরু করেন। ঢাকার মিরপুর থেকে ক্রয় করেন দু’টো মেশিন। সঙ্গে শাড়ি তৈরির সুতা, জড়ি, কেলা, তানি, রঙসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন।

এভাবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা তৈরিতে তিনটি ধাপের প্রয়োজন হয়। তখন একেকটি কারখানার পেছনে ২০-২২ হাজার টাকার মত ব্যয় করতো হতো বলেও যোগ করেন আব্দুল ওয়াহেদ।

আব্দুল জব্বার, আব্দুল আহাদ, জাহেদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, প্রথমদিকে একটি শাড়ি তৈরিতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতো। তখন বিদ্যুৎ ছিলো না। গ্রামীণ অবকাঠামো ভাল ছিল না। এখন কলোনির বিদ্যুৎ রয়েছে। রাস্ত-ঘাট আগের তুলনায় বেশ ভাল। বর্তমানে দুই-তিন দিনেই তৈরি করা যাচ্ছে উন্নতমানের একেকটি বেনারসি শাড়ি।

৯০’সালের পর থেকে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। নারীরাও এ পেশায় নিজেদের যুক্ত করতে থাকেন। সাংসারিক কাজের ফাঁকে-ফাঁকে একাজ করেন তারা।

সময়ের ব্যবধানে এ গ্রামের বেশির ভাগ নারী এ পেশার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। এ থেকে বাড়তি আয় হয়। যে আয় অভারের সংসারের অভাব অনেকটা দূর করে বলে হুমাইরা, হোসনে আরা, রোকেয়া, বিউটিসহ একাধিক নারী বাংলানিউজকে জানান।

এসব ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ীরা ঘোলাগাড়ী কলোনিতে তৈরি করা বেনারসি শাড়ির প্রধান ক্রেতা। এছাড়া রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় এসব শাড়ি বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।