ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইসলামী ব্যাংকের ৯০% ঋণগ্রহীতাই জামায়াত-সংশ্লিষ্ট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৭
ইসলামী ব্যাংকের ৯০% ঋণগ্রহীতাই জামায়াত-সংশ্লিষ্ট!

ঢাকা: দেশে জঙ্গি অর্থায়নের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদার করা এবং অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষে গঠিত টাস্কফোর্সের এক সভা হয় গত মাসে। এটি ছিল টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভা। সভায় বল‍া হয়, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

উক্ত ঋণের অর্থ জঙ্গিবাদ প্রসারে ভূমিকা রাখছে রাখছে কি না তা বাংলাদেশ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও সকল প্রকার গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তদারকি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায়।

চলতি বছরের ২১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

সভার শুরুতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা ও অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত এই টাস্কফোর্সের সবাইকেই আরও সক্রিয় হতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক, পুলিশের বিশেষ শাখা, ডিজিএফআই’র ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি, ডিএমপি কমিশনার এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সভায় জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানত ৬৭ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ ৬১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ব্যাংকের এক কোটি ২০ লাখ গ্রাহক আছে। এদের ৮০ শতাংশ সাধারণ ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু আর ২০ শতাংশ আমানতকারী মওদুদী আর্দশের জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের। এই ২০ শতাংশ আমানতকারীই জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদেরকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সভায় আরো জানানো হয়, বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতার সংখ্যা সাত লাখ ৫১ হাজার। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ‘ত্যাগী নেতা ও ক্যাডার’। এসব ঋণগ্রহীতার মাধ্যমে প্রায় ৮০-৯০ লাখ লোক জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি ও জঙ্গি-সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। ব্যাংকটির বেশিরভাগ কর্মকর্তা আগে শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিধায় তারা বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি অর্থায়নে ভূমিকা রাখেন।

সভায় সুদমুক্ত আমানতকারীদের সুদ-লভ্যাংশের কত টাকা শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে জমা হয়েছে এবং এ অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে তার একটি হিসাব আগামী সভায় উপস্থাপন করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়।

সভার কার্যপত্রে বলা হয়, জঙ্গি সংগঠনের অর্থের উৎস অনুসন্ধানে কোন ব্যক্তি, সংগঠন, বা প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে অস্বাভাবিক লেনদেন তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীকে অবহিত করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স কোনো জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত হচ্ছে কি-না এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং লেনদেনের কোনো অর্থ জঙ্গিবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে। এখন থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানেও প্রেরকের পূর্ণ ঠিকানা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এমন কি বেঁধে দেওয়া হবে একক লেনদেন সীমা।

বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে জঙ্গী তৎপরতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা দেখতে নজরদারি বাড়াতে হবে।

এজন্য ব্যাংকহিসাব খুলতে গ্রাহকের যেসব তথ্যের প্রয়োজন পড়ে, সেসব তথ্য সন্নিবেশিত করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব খোলার কথা ভাবছে সরকার।

মোবাইল ব্যাংকিং এর হিসাব খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের কপি, ছবি, নমিনির তথ্য, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং একজন পরিচয়দানকারীর তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নির্ধারিত অফিসিয়াল ঠিকানা ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া লেনদেনের যাবতীয় তথ্য নির্ধারিত রেজিস্ট্রার খাতায় সংরক্ষণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএফআইইউ এর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাত। এটি নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।