ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভ্যাট নিবন্ধনের ই-বিআইএন স্থগিত করলো এনবিআর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
ভ্যাট নিবন্ধনের ই-বিআইএন স্থগিত করলো এনবিআর

ঢাকা: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অনলাইনে ৯ ডিজিটের ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ই-বিআইএন) স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী সনাতনী পদ্ধতিতে ১১ ডিজিটের বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু থাকবে বলে জানা গেছে।

রোববার ( ৯ জুলাই) এনবিআরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ভ্যাট আদায় কৌশল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এনবিআরের নির্ভরশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কফিনে এনবিআর শেষ পেরেক ঠুকে দিল বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৮ লাখ ৮৪ হাজার বিআইএন নিবন্ধন আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২ হাজার বিআইএন নিবন্ধনধারী প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে। আর ৫ জুলাই পর্যন্ত ৮১ হাজার ৩৪ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।   এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট (ভ্যাট) রাজস্ব আয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি পেয়ে থাকে এনবিআর।

ভ্যাট কার্যক্রম আরো সহজ করতে গত ১৫ মার্চ থেকে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন শুরু হয়। এই কার্যক্রম দেখভালে চালু হয় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প।

অন্যদিকে এর আগে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে জাতীয়  রাজস্ব বোর্ড জানায়, ১ জুলাই থেকে সনাতনী পদ্ধতির ই-বিআইএন এর মাধ্যমে কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো যাবে না। কিন্তু ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী সংসদে নতুন ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর পরই গত ২৯ জুন এনবিআর ঘোষণা দেয়, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিআইএন ও ই-বিআইএন দুটোই থাকবে। তার ১২ দিন পরই এনবিআর ই-বিআইএন স্থগিতের ঘোষণা দিলো।

এর ফলে নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর আওতায় এনবিআর গত ২৩ মার্চ থেকে অনলাইনে ই-বিআইএন ইস্যু করার যে কার্যক্রম হাতে নেয় সেটা আপাতত স্থগিত থাকছে। তাই এখন থেকে সকল করদাতা ১১ ডিজিটের বিআইএন ব্যবহার করবে। তবে ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান ১১ ডিজিটের বিআইএন পুনর্নিবন্ধন করে ৯ ডিজিটের নিবন্ধন নিয়েছে তাদের পুনরায় নিবন্ধন নিতে হবে না।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১৫ মার্চ থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের অধীনে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন শুরু হয়। অনলাইনে ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ই-বিআইএন নাম্বার নেওয়ার কার্যক্রম তখন থেকেই শুরু হয়। আর শেষ হয় ৩০ জুন।

কিন্ত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ই-বিআইএন স্থগিত করা হলো। কারণ ই-বিআইএন রাখতে হলে পুরো ভ্যাট কার্যক্রম অনলাইন নির্ভর হতে হয়। কিন্তু ভ্যাট আইন এবারও বাস্তবায়ন না হওয়ায় অবশেষে পুরো দমে কার্যক্রম চলমান থাকলেও অবশেষে ই-বিআইএন স্থগিত রাখা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ই-বিআইএন) স্থগিত এনবিআরের জন্য আরেকটি ধাক্কা। এর মানে হলো, এনবিআর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সক্ষম ছিলো না। আবার এনবিআরের টেকনিক্যাল প্রস্তুতি, রাজনৈতিক ঐক্যমত বা সহমত সৃষ্টি না করা, সামাজিক তা‍ৎপর্য অনুধাবন না করতে পারায় ভ্যাট আইন এবার বাস্তবায়ন হয়নি। আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য এনবিআর-ই দায়ী। কেননা জোর করে কখনো কোনো কিছুরই সফলতা আসে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ই-বিআইএন স্থগিত করার কারণ এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা হয়েছিলো। যেহেতু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হয়নি, সুতরাং আগের পদ্ধতিতে আবার ফিরে যাওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুরনো নিয়মে আবার সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এছাড়া এনবিআর সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হোক এটা কখনো এনবিআর চায় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।