ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভারতের ৫ রুপির পেঁয়াজ ঢাকায় ৮০ টাকা!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
ভারতের ৫ রুপির পেঁয়াজ ঢাকায় ৮০ টাকা! পেঁয়াজ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: এশিয়ার সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম ভারতের মহারাষ্ট্রের লাসাগাঁও ও নাসিক। পুরো ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় রফতানি হয় এখান থেকে। এ বাজারের দরই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির বৈশ্বিক দর নির্ধারণ করে। এর বাইরে ছিলো না বাংলাদেশও। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। 

এখন নাসিক থেকে ৫ থেকে ৯ রুপি কেজি দরে কিনে আনা পেঁয়াজ বাংলাদেশের পাইকারি বাজারে বিকোচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, খুচরা পর্যায়ে যা ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
 
অন্যদিকে নাসিকের অর্গানিক পেঁয়াজ (দেশি) ২০ থেকে ২৬ রুপিতে এনে পাইকারি দর রাখা হচ্ছে ৯০ টাকা, খুচরা বাজারে যা ১২০ টাকা কেজি।

 

তবে নজরদারি সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে কোনো তদারকি নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিন্ত আছে দিল্লিতে প্রতি কেজি পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ রুপি দরে এ তথ্য বিশ্বাস করে!
 
লাসাগাঁও ও নাসিকে পেঁয়াজের দামে ধস নামে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে। আগস্টের শেষ দিকে এ মোকামে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ২ হাজার ৬০০ ভারতীয় রুপিতে বিক্রি হলেও তখন দাঁড়ায় ৯০০ রুপিতে। বর্তমান দর ৫০০ রুপি বা প্রতি কেজি ৫ রুপি,  বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৬ টাকা। অন্যদিকে এ গ্রেডের পেঁয়াজের দর ৯ রুপি বা ১১ টাকা ৭০ পয়সা।
 
ভারতীয় কৃষিপণ্য বিক্রির বিখ্যাত অনলাইন ‘ইন্ডিয়া মার্ট’ এর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) নাসিকের নিপাডা এলাকার রফতানিকারক অরুণ ভেজিটেবল প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ৫ রুপি বা সাড়ে ৬ টাকা দরে। নিপাডা’র গায়ত্রি ফার্মারস প্রডিউসার লিমিটেড ও পঞ্চবটি’র কাঞ্জি ভাগঞ্জি আড়ত হেঁকেছে ৮ রুপি বা ১০ টাকা ৪০ পয়সা। নন্দলালপুরের ভিসাল সূর্যভান বার্কি ৮ রুপি ও লাসালগাঁওয়ের ৯ রুপি দরে বিক্রি করছে।
 
অন্যদিকে মেলগাঁওয়ের ‘নাজিম ট্রেডার্স’ তাদের এ গ্রেডের পেঁয়াজের দর হেঁকেছে প্রতি কেজি ১০ রুপি বা ১৩ টাকা। এখানকার মহাত্মানগরের জয়া চন্দ্র ফুডস্‌ প্রাইভেট লিমিটেড এ ও বি গ্রেডের পেঁয়াজের দাম রাখছে ৯ রুপি বা ১১ টাকা ৭০ পয়সা। সায়েখাদার হেমন্ত ট্রেডিং এ গ্রেডের পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১৩ রুপি বা সাড়ে ১৬ টাকা দরে।
 
সান্তানা, থানে, মুম্বাই, নাবি মুম্বাই, আহমেদনগর, আহমেদাবাদ, আওরঙ্গবাদ, পুনে, বেঙ্গালুরু, পাটনাসহ ভারতের অন্য পেঁয়াজের মোকামের অবস্থাও প্রায় একই। কিন্তু সেসব মোকাম থেকে পেঁয়াজ এনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ৮ থেকে ১৬ গুণ বেশি দরে বিক্রি করছেন।  

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে দাম কমলেও তারা বিক্রি করছেন আগে বেশি দরে আনা পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ এলেই দর কমে যাবে।
 
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর)  রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।  

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই দেশি পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে কেজিতে ৫০ টাকা এবং একমাসে বেড়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। একমাস আগেও দেশি পেঁয়াজ ৬৬ থেকে ৭৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে মিলেছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। গত বছরের এ সময় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশেই ২১ লাখ ৭২ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন।
 
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক বছরের ব্যবধানে তিনগুণ দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। বলা হচ্ছে, ভারতের বাজারে বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও বেড়েছে। এটি ব্যবসায়িক আগ্রাসন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন।
 
তবে শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় নতুন পেঁয়াজ এলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশের পাশাপাশি পাশের দেশ ভারতে এবার পেঁয়াজের আগাম আবাদ ভালো না হওয়াকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভারতের (দিল্লি) বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৯০ রুপি বলে জানান মন্ত্রীকে।
 
তোফায়েল বলেন, ‘পেঁয়াজ ও চালের দাম ক্ষণস্থায়ী সময়ের জন্য বেড়েছে এবং এ বিষয়ে আমরা যত্নবান ও সচেতন। ভারতের চেয়ে দেশের পেঁয়াজের দাম বেশি। আমার মনে হয়, এখন সিজন আসছে, দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
আরএম/এএসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।