ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কৃত্রিম ফুল: করোনায় চাষিদের ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
কৃত্রিম ফুল: করোনায় চাষিদের ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ ফুল ছিঁড়ছেন চাষি। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: কথায় বলে, যারা ফুল ভালোবাসে না, তারা মানুষ খুন করতে পারে। ফুল ভালোবাসে না এমন লোক পাওয়া বিরল।

ফুল ভালোবাসা-ভালোলাগার প্রতীক। বিভিন্ন উৎসবে, আগমনে-বিদায়ে, শ্রদ্ধায় ফুলের কদর বেশ। তবে ইদানিং কৃত্রিম ফুল দখল করে নিয়েছে প্রকৃত ফুলের স্থান। কৃত্রিম ফুলে কপাল পুড়ছে দেশের ফুল চাষিদের। ফলে করোনার কৃত্রিম ফুল প্রকৃত ফুল চাষিদের 'মরার উপর খাড়ার ঘা' হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি দেশে সবথেকে বেশি ফুল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন এবং যশোরের ঝিকরগাছা এলাকার ফুল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ দুর্দশার কথা জানা যায়।

তারা জানান, করোনা ভাইরাসকালীন লকডাউনের সময়ে সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাগানে ফুল ফুটে আবার গাছেই পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এতে ফুল গাছের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ফুলের উৎপাদন কম। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল, কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজন বন্ধ থাকায় বর্তমানে ফুলের বেচাকেনা ও চাহিদাও অনেক কম। আবার এই কম চাহিদার পাশাপাশি ভাগ বসিয়েছে কৃত্রিম প্লাস্টিকের ফুল। যার ফলে প্রকৃত ফুলের চাহিদা আরও কমে গিয়েছে।

ফুলের বেশি চাহিদা থাকে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে। বিভিন্ন উৎসব এবং অনুষ্ঠানে ফুল শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। তবে বর্তমান সময়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা কৃত্রিম সুবাসহীন প্লাস্টিকের ফুল অনেক অনুষ্ঠানে শোভা পায়।

ফুল চাষিরা জানান, প্লাস্টিকের ফুল বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো একবার কিনে বার বার সেগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে পারে। প্লাস্টিকের এসব ফুল দেখতেও অবিকল আসল ফুলের মতই। আসল ফুল দিয়ে সাজানোর চেয়ে প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে সাজালে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর লাভ বেশি হয়। তাই তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা বাঁচানোর জন্য প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করে। এবিষয়ে জানতে চাইলে সাদুল্লাপুর গ্রামের ফুলচাষি শাহজাহান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে সাজানো হয়, প্লাস্টিকের ফুল ভাড়া দেওয়া হয়। প্লাস্টিকের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুল এমনকি বিভিন্ন ধরণের পাতা বাহারও ভাড়া পাওয়া যায়। এগুলো একবার কিনে কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের ফুলের কারণে আমাদের আসল ফুলের চাহিদা কমে যাচ্ছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফুলের সঠিক দামও পাচ্ছি না।

প্লাস্টিকের ফুলের বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিকের ফুল আমাদের ফুলচাষিদের জন্য বড় ধরণের হুমকি, এটাকে আমাদের জন্য বিষফোঁড়াও বলা চলে। প্লাস্টিকের ফুল নিষিদ্ধের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছি। আমরা কৃষি মন্ত্রণালকেও প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বলেছি। আমরা প্লাস্টিকের ফুলের ব্যবহার প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিকের ফুলের কারণে প্রকৃত ফুলের সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষি এবং মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বার্ষিক প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি বর্তমানে ফুলের বাজার। যখন ফুলের বাজার ছিলো না, তখন কিন্তু কেউ প্লাস্টিকের ফুল আনেনি, এখন আমরা যখন দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফুলের বাজার তৈরি করেছি। তখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করে আমাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের দাবি সরকার যেন প্লাস্টিকের কৃত্রিম ফুল আমদানি নিষিদ্ধ করে। তাহলে আমাদের এই ফুলের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রটি আরও প্রসারিত হবে। এতে দেশ উপকৃত হবে, সেই সঙ্গে আমরাও উপকৃত হবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
আরকেআর/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।