ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক দশক পূর্তি

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণের প্রত্যয় এমএফএস’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণের প্রত্যয় এমএফএস’র

ঢাকা: কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন সহজ, নিরাপদ, তাৎক্ষণিক করা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরো সম্প্রসারিত করার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকায় শেষ হলো মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) এক দশক পূর্তি উদযাপনের সমাপনী উৎসব। ১১ কোটির বেশি গ্রাহকের এমএফএস খাতের দশক পূর্তি উদযাপিত হচ্ছে ‘হাতের মুঠোয় আর্থিক সেবা’ স্লোগানে।

শনিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

অনুষ্ঠানে এমএফএস-এর এক দশক পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি শেখ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বাণী পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান।

ডাচ–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিন, বিকাশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কামাল কাদীর এক দশকে কোটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে ওঠা এমএফএস-এর যাত্রা পথের চিত্র এবং ভবিষ্যতের এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, ট্যাপ, মাই ক্যাশ, টেলিক্যাশ, ট্যাপ এন পে, এফএসআইবিএল, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, ওকে ওয়ালেট, ইসলামিক ওয়ালেট ও নগদের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ জুড়ে মেলা, আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দশক পূর্তি উদযাপিত হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এমএফএস-এর কল্যাণে এখন আমরা যেখানেই থাকি, যখন দরকার তখনই কয়েকটা বাটন চেপে ডিজিটাল মানি পৌঁছে দিতে পারি প্রিয়জনের কিংবা যার প্রয়োজন সেই মানুষটির কাছে। কেনাকাটা, পেমেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব সেবাই এখন এসে গেছে গ্রামের কিংবা শহরের, শিক্ষিত কিংবা শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত, ধনী কিংবা দরিদ্র– সব সাধারণ মানুষের আঙ্গুলের ডগায়। এটিই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গত দশ বছরের অর্জন। ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানদের, দৈনন্দিন লেনদেন সহজ করে কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে মোবাইল ফোন ও অ্যাপ নির্ভর ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সেবা মানুষ এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ধরনের ভাতা এখন এমএফএস-এর কল্যাণে সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইল ফোনে পৌঁছে যাচ্ছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থিক লেনদেন নিশ্চিতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান আরো উন্নত করবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে–এটিই আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, আমি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই, যারা শুধুমাত্র গ্রাহক-বান্ধব সেবা চালু করেনি বরং মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের জ্ঞান বা ডিজিটাল লিটারেসি বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমএফএস খাত সংশ্লিষ্ট সব  প্রতিষ্ঠান ও স্টেকহোল্ডারদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এত এগিয়ে গেছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে দুই পর্বের আয়োজনে প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার নিয়ে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এতে এমএফএস নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার পরিপ্রেক্ষণ থেকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক এবং এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিপ্রেক্ষণ থেকে আলোচনা করেন ইসলামী ব্যাংকের এমডি এবং সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।

প্রসঙ্গত, ৩ মার্চ শুরু হয়ে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিভিন্ন আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘এমএফএস মেলা’। সবশেষ ১০ মার্চ ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। সচেতনতামূলক পুতুল নাচ, গম্ভীরা, মঞ্চ নাটকের জমজমাট আয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক, এজেন্ট, মার্চেন্টসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

এক দশক আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্রশস্ত হয় বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবার পথচলা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অংশ হিসেবে ব্যাংকিং সেবার বাইরে বা সীমিত ব্যাংকিং সেবার আওতায় থাকা জনগণকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে ২০১১ সালে শুরু হয় মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে মাত্র দশ বছরেই এমএফএস এখন দেশের মানুষের প্রতিদিনের আর্থিক লেনদেনের অংশ।

ব্যাংক-লেড মডেলে যাত্রা শুরু করা এ খাতে বর্তমানে ১৩টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে। সবগুলো এমএফএস মিলিয়ে গ্রাহক সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। এজেন্ট সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। গড়ে দৈনিক দুই কোটি বারের ওপরে লেনদেন হয় এমএফএসে, টাকার অংকে যার পরিমাণ দুই হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর জন্য ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউটের সুযোগ নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল সেবা যুক্ত করেছে এমএফএস। মোবাইল রিচার্জ করা, বিদেশ থেকে সরাসরি রেমিটেন্স পাওয়া, মোবাইল অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত অর্থের ওপর মুনাফা, বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি সেবার বিল পেমেন্ট, ব্যাংক থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা আনা, এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বিতরণ, এমএফএস অ্যাকাউন্টে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ন্যানো ঋণ এবং মাসিক সঞ্চয় সেবাসহ প্রতিনিয়তই নতুন সেবায় সমৃদ্ধ হচ্ছে এমএফএস খাত। ফলে সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এসেছে মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
এসই/এনএসআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।