ঢাকা: ঈদ পরবর্তী প্রথম সপ্তাহ সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচক কমলেও টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে।
রোববার (১৫ মে) পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানিয়েছেন তারা।
বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগসহ পুঁজিবাজারে জন্য বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা থাকবে বলে আমরা আশা করছি। এতে করে বাজার ইতিবাচক থাকবে বলে জানান তারা।
ঈদের ছুটির আগে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় লেনদেনও ভাটা দেখা দিয়েছিল। ঈদ পরবর্তী লেনদেনে গতি ফিরেছে এতে করে বাজার ভালো হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন মা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ঈদের আগে নিম্নমুখী থাকা পুঁজিবাজার ঈদ পরবর্তী কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ঈদের আগে সাধারণত বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় বাজারে লেনদেন কমে যায়। ঈদ পরবর্তী বাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা পেরিয়েছে। এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।
আগামী বাজেটে শর্তহীন অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগসহ পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা থাকবে বলে আমরা আশা করছি। এতে করে সামনের দিনগুলো বাজারে সূচক ও লেনদেনে চাঙা ভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার ঘটনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছিল। কিন্তু সেটা কেটে গেছে। আগামী বাজেটে আশা করছি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু ঘোষণা আসবে। সুতরাং বাজারে স্থিতিশীলতা থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিনিয়োগকারী সাজিদ হোসেন বলেন, ঈদের পর বাজার আবার শুরু হয়েছে নতুন উদ্যমে। গত সপ্তাহে সূচক কিছুটা কমলেও লেনদেন আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। বাজারের বর্তমান আচরণ ইঙ্গিত দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে নতুন উদ্যমে লেনদেনে ফিরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। কারণ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর কাছাকাছিতে অবস্থান করছে। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে (০৮-১২ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ৯৩০ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৫৭ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার ৯২৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ৩৪০ কোটি ০১ লাখ ৮২ হাজার ১০৭ টাকা বা ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯০ পয়েন্ট বা ১.৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট বা ১.০২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫৩ পয়েন্ট বা ২.১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৩২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৪০৬ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১২৩টির, কমেছে ২২৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৯ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৩১ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৫ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৩৫ কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৪ টাকা বা ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪১.১৭ পয়েন্ট বা ১.২৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২৪৮.৬১ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৮টির দর বেড়েছে, ১৮৩টির কমেছে এবং ২২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
এসএমএকে/কেএআর