ঢাকা: রাজধানীর মানুষ ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খাবে এটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, মানুষ ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনবে- এটা আমিও চাই, এটা অস্বাভাবিক না।
সোমবার (১৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে দ্রব্যমূল্যের বর্তমান পরিস্থিতিসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোটার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বেও সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ১৮-২০ টাকা পড়ে। কৃষক প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ টাকা ও ভোক্তা পর্যায়ে ৪৫ টাকা হলে সমস্যা হবে না। কৃষক ২৫ টাকার কমে দাম পেলে উৎপাদনে আগ্রহী হবে না। ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনবে- এটা আমিও চাই; এটা অস্বাভাবিক না।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজের দাম যদি কৃষক ২৫ টাকা পায়, তাহলেও মোটামুটি পোষানো সম্ভব। পরে এর সঙ্গে ট্রান্সপোর্টসহ কিছু খরচ যুক্ত হয়। আমরা কিছু কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি। পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়। কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তেল-চিনি ডালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ৯০ শতাংশ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের কিছু করার থাকে না। এসব পণ্য বেসরকারি খাত আমদানি করে চাহিদা পূরণ করছে। সরকার একটি অভিন্ন মূল্য পদ্ধতি অনুযায়ী কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। বিশেষ করে আমদানি মূল্য, ট্যাক্স, জাহাজ ভাড়া এবং লাভসহ হিসাব বিবেচনায় নিয়ে একটি দাম নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, ভোক্তা হোক, সরকার হোক, সাংবাদিক হোক, আমি, ব্যবসায়ী বা মন্ত্রী সবাইকে কিন্তু সমানভাবে চিন্তা করতে হবে। যুদ্ধটা শোভন নয়। গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট পড়তে শুরু করেছে। জাহাজের ভাড়া বাড়তে শুরু করেছে। যে মানুষটা ৫ লিটার বা ১০ লিটার তেল বা ডাল কিনতো তাকে তো চিন্তা করতে হবে। আমরা সবাই জানি যখন বিপদ হয় বা ক্রাইসিস হয় তখন কোথাও না কোথাও আমরা বাজেট কাটছাঁট করে চলি। যুদ্ধ যদি লম্বা হয় সমস্যা আসবে। আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই যেন সাশ্রয়ী হই, সতর্ক হই।
মন্ত্রী বলেন, রমজানে ভোগ্য পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশ্বাস রাখা হয়েছিল। কিন্তু রমজান শেষ হওয়ার ১০ দিন আগেই বাজার থেকে সয়াবিন সরিয়ে নেওয়া হয়, রমজান শেষে দাম বাড়ার আশায়। তাদেরকে বিশ্বাস করা ভুল ছিল, আর আমাদের সিদ্ধান্তও ভুল ছিল। আমরা যদি রমজানের মাঝামাঝি একটা দাম নির্ধারণ করে দিতাম তাহলে এটা হতো না।
গম রপ্তানির বিষয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ডলারের তুলনায় টাকার মান কমে গেছে। এখন এক ডলার সমান ৯২-৯৩ টাকা, যা আগে ছিল ৮৪ টাকা। এই সময় ভারত ঘোষণা দিয়েছে তারা গম রপ্তানি বন্ধ রাখবে। তবে আশার কথা, তারা বলেছে প্রতিবেশী দেশগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন হলে তারা বিবেচনা করবে। আমরা নেগোসিয়েশন অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি ইউক্রেনসহ বিকল্প পাঁচটি উৎস থেকে গম আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে।
রপ্তানি আয় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবার আমাদের ৪-৫টা আইটেমের রপ্তানি আয় বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। যেগুলো কোনো দিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারেনি। এই মুহূর্তে গার্মেন্টস সেক্টর খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্টসে ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান আছে। এক-দেড় বছরের মধ্যে গার্মেন্টসে ৫ মিলিয়ন মানুষের কর্ম সংস্থান হবে। অর্থাৎ গার্মেন্টসে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা ৬০ বিলিয়ন রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি। ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি। ১৫০টিরও বেশি দেশে ফার্মাসিটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ৯০ শতাংশ এসব পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে।
এসময় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মেহদী আজাদ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, হাসিফ মাহমুদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ১৬,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড