ঢাকা: এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত ব্যাংকটির নাম রেখেছিলেন অগ্রণী। ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স আহরণ, আমানত, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, গ্রিন ব্যাংকিং, অনাদায়ী ঋণ আদায়, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে শীর্ষে উঠে এসেছে এক সময়ে সব সূচকে পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত এ বাণিজ্যিক ব্যাংক।
স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫ বছরে অনেক ক্ষেত্রেই বেশি কাজ হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকে। যে কারণে সাফল্যও ধরা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। করোনা মহামারিসহ নানামুখী প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্প্রতি আর্থিক খাতের আইকনিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে অগ্রণী। আর এ অভাবনীয় অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকের ক্রান্তিকালে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ব্যাংকের সব ব্যবসায়িক সূচকে বড় অগ্রগতি সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সব স্তরে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি ও গতিশীলতা আনেন। এতে ব্যাংক আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ অগ্রযাত্রার যোগ্য সারথী হিসেবে ব্যাংকটিকে তিনি নিয়ে এসেছেন সম্মুখ সারিতে।
বর্তমানেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ব্যাংকের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মোহম্মদ শামস-উল ইসলামকে সরকার ২০১৯ সালে পুনরায় ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। তার সময়েই ২০২১ সালের মে মাসে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে। কোভিড মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা কিছুটা কমলেও ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এসময় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকে।
ছবি: ডিএইচ বাদল
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যেসব দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেগুলো যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে ব্যাংকে গুড গভর্নেন্স বাস্তবায়নে আমরা বেশ উন্নতি করেছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমি অগ্রণী ব্যাংকে একটি ভালো পর্ষদ পেয়েছি যারা প্রতিনিয়ত ব্যাংককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথোপযুক্ত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে অনেক সমস্যাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের জ্বালানি ঘাটতি পূরণের জন্য তেল ও গ্যাস আমদানিতে সহায়তার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডলার সংকটে বিপিসি পেট্রোবাংলার জন্য অনেক ব্যাংক এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। একমাত্র অগ্রণী ব্যাংক এলসি চালু রেখেছে। আমাদের কোনো এলসি আনপেমেন্ট থাকেনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তেল আমদানিতে আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। আমরা চাপের মধ্যেও দেশের স্বার্থে এলসি অব্যাহত রেখেছি। কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।
বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্য ১৫টি বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টে ২৩৫৫.৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৭৭২৫.৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন ১৩২০ মোট বিদ্যুৎ প্লান্টে আরও ২,৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ মজুরি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক ৯৭টি প্রকল্প সিন্ডিকেট/কনসোটিয়াম/ক্লাব ব্যবস্থার আওতায় ৬২৯১ মোট টাকা ঋণ মঞ্জুর এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করেছে ৪,৪০৩ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ২৬টি ঋণ প্রকল্পে লিড এরেঞ্জার ও এজেন্ট ব্যাংক হিসেবে ৪৭৮০ কোটি টাকা এবং আরো ৭১টি প্রকল্পে সদস্য ব্যাংক হিসেবে ১৫১১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকের ৯৬৮ শাখার মাধ্যমে বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে মোট ৬৬০১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
২০১৬ থেকে ২০২১ সাল সময়ে ক্রমপুঞ্জিত বৈদেশিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৮৯ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময়ে বিশেষ প্রণোদনা এবং সিঙ্গাপুরে রেমিট্যাপ অ্যাপ চালু করায় অন্যান্য বছরের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বাড়ে। ঐ বছর রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১৪ কোটি টাকা। করোনার সময়ে সারা বিশ্বের মতো সিঙ্গাপুরেও লকডাউন শুরু হয়। প্রবাসীরা বিশেষ করে শ্রমিকরা ডরমিটরি থেকে বের হতে না পেরে দেশে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। এই সময়ে মোহম্মদ শামস্-উল ইসলামের উদ্যোগে এবং এক্সচেঞ্জ হাউজের সিইওর প্রচেষ্টায় একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে শ্রমিকরা ডরমিটরি বা কর্মস্থলে থেকেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। করোনাকালে এটি ছিল এক অনন্য উদ্ভাবন। সিঙ্গাপুর সরকারের কাছেও এটি প্রশংসিত হয় এবং সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত MAS Fintech Award (ASEAN Fintech)-2020 অর্জন করে।
বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে বিগত পাঁচ বছর ধরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম স্থান অর্জন করে যাচ্ছে। বর্তমানে ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে এ ব্যাংকের মাধ্যমে। বর্তমানে আমরা ৩ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। আমরা মনে করি, এই প্রণোদনা জনগণকে নয় ব্যাংকের মালিকদের দিচ্ছি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহজে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়াও কানাডায় অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব রেমিট্যান্স হাউজের মাধ্যমে সহজেই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাংকের ৯৬৮ শাখার মাধ্যমে তাদের আত্মীয় স্বজনদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে।
ছবি: ডিএইচ বাদল
এদিকে লকডাউনের কারণে আয় কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাঁটাই করতে থাকে। শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংকটি “আমাতনবিহীন সহজ শর্তে প্রবাসীর ঘরে ফেরা ঋণ” প্রডাক্ট চালু করে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা এই স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।
ব্যাংকটি পুরাতন ধ্যানধারণার পরিবর্তে নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরিতে উদ্যোগী হয় উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কম-বেশি ২৫টি নতুন লোন প্রডাক্ট চালু অথবা পুরাতন প্রডাক্ট যুগোপযোগী করা এবং গ্রাহক আকৃষ্ট করার মতো সংশোধনী আনা হয়েছে। পাশাপাশি কর্পোরেট গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। কর্পোরেট গ্যারান্টি এবং সিন্ডিকেট ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অংকের ঋণ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলোকে গ্রাহক হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গ্রাহক সিলেকশন বা নির্বাচন। ফলে ব্যাংকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে। এ সময় নগদ আদায় হয় ১৯৩ কোটি টাকা যা প্রবৃদ্ধির হারে ১০৪ শতাংশ এবং নিয়মিতকরণ ও অন্যান্য আদায় হতে প্রবৃদ্ধির হার ১০৭১ শতাংশ, যা টাকার অংকে ৫২৫ কোটি টাকা।
মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, আমার যাওয়ার সময় চলে এসেছে। ২০১৬ সালে ২৪ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০০ দিনের একটি প্রোগ্রাম নিই। এর ফলে আমাদের আয় হয় ৫৫৬ কোটি টাকা। যখন ১০০ কোটি ছিলো অগ্রণী ব্যাংকের কাছে স্বপ্নের মতো। আর গত জুন মাসে আয় হয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা।
আগামী ডিসেম্বরে ২ হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়ে শামস-উল-ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুর বিপুল নির্মাণ ব্যয়ে সহায়তা করতে যখন বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা পিছিয়ে গেল তখন প্রধানমন্ত্রী সাহসী পদক্ষেপ নিলেন। ঘোষণা দিলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। আর তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপের অংশীদার হয় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এবং বিপুল ব্যয়ের বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের দায়িত্ব নেয়। আগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগান দিয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড:
বাংলাদেশে প্রথম পিপিপিত আওতায় নির্মিত ১১.৭ কি. মি. দীর্ঘ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে (যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার) ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সাহসী পদক্ষেপ নেয় অগ্রণী ব্যাংক। এমন বিনিয়োগ অগ্রণী ব্যাংককে দেশের উন্নয়নে অংশীদার করেছে। এছাড়া সরকারি কর্মচারী গৃহনির্মাণ নীতিমালার আওতায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহজ শর্তে ঋণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মধ্যে সর্ব প্রথম এবং একমাত্র ব্যাংক হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকটির ওবিই এর মোটা বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা সম্ভব হয়েছে কৃষকদের জন্য। এজন্য অগ্রণী ব্যাংক কৃষি ঋণ দিচ্ছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে, যেখানে অন্যান্য ব্যাংক দিচ্ছে ৯ শতাংশ হারে।
এক লাখ কোটি টাকার মাইল ফলক:
২০২১ সালের মে মাসে দেশের তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে লাখ কোটি টাকার আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করে অগ্রণী ব্যাংক। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ১ লাখ এক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে ট্রিলিয়ন টাকার ক্লাবের সদস্য হয়েছে। অথচ এই সময়ে আমানত ধরে রাখাই ছিল চ্যালেঞ্জ। কারণ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বেসরকারি ব্যাংকে আমানতে সুদহারও দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বেঁধে দেওয়া হয়। এসবের সঙ্গে করোনা মহামারির কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমানত দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে পেরেছে মোহম্মদ শামস-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অগ্রণী ব্যাংক।
শুধু আমানত বাড়িয়ে ব্যাংকের ভিত মজবুত করা নয়, বিপুল ঋণ বিতরণের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন শামস-উল ইসলাম।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৫ বছরে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে ২৬ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫ বছরে ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে ৩৩ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির ১ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের পরিমান ৬৬ হাজার ১২ কোটি টাকা।
গত ৫ বছরে ব্যাংকের মোট সম্পদও বেড়েছে বিপুল পরিমাণে। ৪৫ বছরে যেখানে সম্পদ বেড়েছে ৬২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট সম্পদ ছিলো এক লাখ ১৯ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৫ বছরে বেড়েছে ৫৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। আর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির লোকসানি শাখাও কমেছে। ৫ বছরে লোকসানি শাখা ৬০টি কমে ১৮টিতে নেমেছে। এদিকে ২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে ১৩ শতাংশে নেমেছে। ৫ বছরে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, করোনা মহামারি না থাকলে বিগত বছর শেষেই শ্রেণিকৃত ঋণ আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারতাম। চলতি বছর শ্রেণিকৃত ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাই হবে আমাদের লক্ষ্য।
ছবি: ডিএইচ বাদল
ব্যাংকিং খাতে তারল্য সরবরাহ:
ব্যাংকিং খাতে তারল্য সরবরাহ করার লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক ১৮টি ব্যাংক এবং ২৭টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫৩১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আইসিবিকে ১,৭৫০ কোটি টাকা তহবিল সাধারণ ছাড়া ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে ১,৬৫০ কোটি টাকা নিজস্ব বিনিয়োগ করেছে। তাছাড়া ইক্যুরিটি পার্টিসিপেশনের আওতায় ব্যাংকটি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডে ১৬৫ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ১৬ কোটি টাকা, আইসিবিতে ৬৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৯ কোটি টাকা এবং বেল্ট হোল্ডিংস লিমিটেডে ৩৭৫ কোটি টাকা ইক্যুরিটি বিনিয়োগ করেছে। নারী উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করার লক্ষ্যে এসএমই খাতে ২১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
আর্থিক অন্তর্ভূক্তি মূলত ব্যাংকিং সেবায় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড প্রথম। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মধ্যে অগ্রণীর ব্যাংক রেমিট্যান্স আহরণে ধারাবাহিকভাবে ‘১’, অনলাইন ব্যাংকিং- এ ‘১ম’ এবং এজেন্ট ব্যাংকিং- এ ‘১ম’। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক টু বিকাশ (মোবাইল ফিনালসিয়াল সার্ভিস) লেনদেন চালু, ১০/- (দশ) টাকায় কৃষকদের হিসাব খোলা, স্কুল ব্যাংকিং চালু, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা প্রদান ইত্যাদি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সেবার মাধ্যমে ব্যাংকটি দেশের কোটি জনতার অবস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাত্র ৫ বছরে এত অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো- এমন প্রশ্নে মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করার ফলেই ৫ বছরে এত অর্জন সম্ভব হয়েছে। কারণ কীভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেই আদর্শ স্থাপন করে গেছেন জাতির পিতা। যে কেউ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করবে তার পক্ষেই সম্ভব হবে দেশের ও দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার।
দেখা গেছে, ৪৫ বছরের কাজ ৫ বছরেই করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু কর্নারের নন্দিত উদ্ভাবক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম। তাই আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।
শামস-উল-ইসলামের কর্মকালীন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরষ্কার পায়। ২০১৭ সালে অ্যারাবিয়ান ব্যাংকার্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড সিটিব্যাংক এন এ পারফরমেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯ সালে আইসিএমএবি বেস্ট কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড পায়। প্রথমবারের মতো আণী ব্যাংক লিমিটেড অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৯-২০২০ এর মূল্যায়নে ১ম স্থান অর্জন করে। আর বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের মধ্যে ১ম এবং দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে। ২০২০ সালে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের মধ্যে সবুজ অর্থায়নে ১ম স্থান অর্জন করে। অগ্রণী ব্যাংক পরপর ৪ বছর আইসিএবি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ব্যক্তিগতভাবে মোহম্মদ শামস-উল-ইসলামকে ড. ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ‘কেট ব্যাংকার’ হিসেবে ৮ম ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ প্রদান করে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও তাকে সম্মানিত করেছে।
উল্লেখ্য, প্রথম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। বিগত কয়েক বছরে আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ব্যাংকিং সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের ১৬২টি শাখায় রিয়েলটাইম অনলাইন ব্যাংকিং করে থাকে যা সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রথম স্থানে। ব্যাংকটি বর্তমানে সকল শাখার মাধ্যমে BEFTN, RTGS, e-Tendering e-GP. A Challan Nothi এবং এসএমএস একটি সার্ভিস প্রদান করে থাকে। সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৭টি এটিএম বুথে ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ব্যাংকটি দেশব্যাপি ‘আগ্রণী দুয়ার’ নামে এজেন্ট ব্যাংক স্থাপন করে। বর্তমানে এ ব্যাংকের এজেন্টের সংখ্যা ৪০০টি। ব্যাংকিং সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেন সুবিধার্থে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও বিকাশ চুক্তিবদ্ধ হয়। ফলে অগ্রণী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রহণ-জমা, টাকা প্রেরণ, বিভিন্ন বিল বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা যায়। দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা এ সেবা চালু থাকে। এছাড়া বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল লোন প্রোডাক্ট চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
জিসিজি