সিলেট: বিদেশিরা বাংলাদেশে স্বর্ণশিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন জানিয়ে বাজুস নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিদেশিরা বিনিয়োগ করলে স্বর্ণশিল্প উপকৃত হবে। তবে বিনিয়োগকারীরা যাতে দেশে শো-রুম খুলতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টম্বর) দুপুরে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সিলেট জেলা শাখার মতবিনিময় সভায় বাজুসের কেন্দ্রীয় নেতারা এ কথা বলেন।
সভায় বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে জুয়েলারি শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সিলেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
বাজুস সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান সওদাগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস চেয়ারম্যান গুলজার আহমেদ। তিনি বলেন, একসময় শুধু স্বর্ণের রেট দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের কোনো কাজ ছিল না। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি বিশিষ্ট শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীর বাজুসের নেতৃত্বে আসার পর থেকে তিনি জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাজুসের দায়িত্ব নিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য পরম পাওয়া।
মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাজুসের সাবেক সভাপতি এবং স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ রায় বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঠিক কোনো দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা না থাকায় পূর্বের সুনাম ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মেলাতে গেলে সব জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। সিলেটে নতুন সদস্য অভিযান শুরু করতে হবে। অনেক তরুণ ব্যবসায়ী, যারা জুয়েলারি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে চায়, আমার বিশ্বাস, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা-উপজেলার সব ব্যবসায়ী সদস্য হয়ে যাবেন।
সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে জুয়েলারি শিল্পকে রক্ষার জন্য বাজুস কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কয়েকমাসে বাজুসের নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা ৭ হাজার থেকে হয়েছে ৪০ হাজার। যারা জুয়েলারি ব্যবসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে নতুন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। জুয়েলারি শিল্প শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আমরা রফতানি করবো।
তিনি বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ দেখে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। তারা এই দেশে অলঙ্কার উৎপাদন করে বিদেশে বিনিয়োগ করবে। বাজুস বাইরের শিল্পের কারণে দেশীয় জুয়েলারি শিল্প যাতে ধংস না হয়ে যায়, সে ব্যপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কেননা বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করলেও শো-রুম খুলতে পারবে না। সেই স্বর্ণ আমাদের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করা হবে। তা না হলে দেশের জুয়েলারি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর আমাদের সংগঠনের আলো। সেই আলো দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল বলেন, আপনারা পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি বস্তুর অন্যতম একটির ব্যবসা করেন। কিন্তু প্রশাসন থেকে নানা শ্রেণিতে আপনাদের নানা ধরনের অপবাদ দেওয়া হয়। আর এটা হয়েছে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে। যে কারণে ভয়েও থাকতে হয়। বাজুস প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন, আপনারা ভয়মুক্তভাবে ব্যবসা করুন। এরইমধ্যে তিনি সংগঠনের কাজের গতি বাড়াতে ১২টি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করেছেন। যাতে বাজুসের কাজের ধারাবাহিকতায় জটিলতা সৃষ্টি না হয়। সারা দেশে ৪০ হাজার জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের একই ছাতার নিচে আনতে চান তিনি। তাই নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হলে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।
তিনি বলেন, সিলেট একটি শক্তিশালী বিভাগীয় শহর। এখানে কমিটি শক্তিশালী হলে বাজুসের সুবিধা ভোগ করবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। যে কোনো বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় অফিসে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলেন এবং কোনো তথ্যের জন্য বাজুসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আহ্বান জানান।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ সম্পাদক ও সদস্য সচিব মো. আবেদিন খোকন বলেন, আমরা ভয় দূর করার জন্য ট্যাক্স দেই, ভয় পাওয়ার জন্য নয়। পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হেনস্তার শিকার হতে হয় ঐক্য না থাকার কারণেই। তাই আগে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
সংগঠনের সিলেট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমজাদ আলী, সদস্য ইয়াসিন সুমন ও মোস্তাফিজুর রহমান জাকিরের যৌথ পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাজুস জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজি বাবুল আহমদ।
এসময় মুক্ত আলোচনায় সিলেটের জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জেলা কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, তাদের নানা সমস্যা ও বাজুসকে এগিয়ে নিতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
আলোচনাপর্ব শেষে অতিথিরা সিলেট জেলা শাখার আসন্ন ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৩ সদস্যের নির্বাচন বোর্ড ও একটি নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করে দেন। নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা হলেন চেয়ারম্যান হাজী মো. সুনু মিয়া, আবুল হাসান নজু ও শেখ মো. আলমগীর।
নির্বাচন আপিল বোর্ডের সদস্যরা হলেন, চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, সদস্য মো. সোহেল আহমদ ও অরুণ কুমার কর। উক্ত নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণপূর্বক ৯০ দিনের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতাপাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
এনইউ