ঢাকা: তুর্কি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে আরও পরিচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অফ টার্কির (ডেইক) চেয়ারম্যান অনুর ওজডেন।
ইস্তাম্বুলে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অব টার্কি (ডেইক) আয়োজিত ‘তুরস্ক-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদের প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইস্তাম্বুলের স্থানীয় একটি হোটেলে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ডেইক চেয়ারম্যান অনুর ওজডেন বলেন, গত কয়েক দশক যাবত বিকাশমান অর্থনীতি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত করেছে। তুরস্কের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অত্যন্ত আগ্রহী।
দ্বিপক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার যোগাযোগ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়াগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এখানকার উদ্যোমী উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রয়াস দেশটিকে ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত করছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি, ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রভৃতি খাতে বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বাজারও বেশ বড়, যা বিবেচনায় নিয়ে তুরস্কের উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারেন।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সামনের দিনগুলোতে তা আরও বাড়বে। তুরস্কের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, আরও প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতরকরণ ও নীতিমালার সংস্কারের ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে দু’দেশের বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ সরকার ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনসহ প্রণোদনা সুবিধা দিচ্ছে। যা গ্রহণ করে তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে এগিয়ে আসতে পারে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সাহসী উদ্যোক্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও সাহসিকতার কারণে আমাদের অর্থনীতির কার্যক্রম চলমান ছিল। পর্যটন খাতে তুরস্কের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেশি এবং বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে তুরস্কের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘জয়েন্ট ইকোনোমিক কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, সুদীর্ঘকাল তেকে বাংলাদেশ উৎকৃষ্ট মানের পাট উৎপাদন করে আসছে। তিনি তুরস্কের কার্পেট খাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য আমদানির আহ্বান জানান। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক ২৯তম বৃহত্তম। দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩০.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছেন। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর অর্থনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ ও তুরস্ক যৌথ উদ্যোগ নিতে পারে।
তিনি বাংলাদেশের শিল্পখাতের আধুনিকায়নে তুরস্কের প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান, এসএমই খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌথ গবেষণা কার্যক্রম এবং এগ্রো ভেলু চেইনের উন্নয়নে তুরস্ককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সেমিনার শেষে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধএদর সঙ্গে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অফ টার্কির (ডেইক) প্রায় ১১০টির বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দু’দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইস্তানবুল গেডিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা চেম্বারের সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এতে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এবং গেডিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের সভাপতি হুলিয়া গেডিক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড