ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি সহৃদয় আচরণ কাম্য

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি সহৃদয় আচরণ কাম্য ছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর ভ্যাট আরোপের ঘটনার রেশ না ফুরাতেই সামনে চলে এসেছে আরো একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। হঠাৎই, অনেকটা নীরবে, ট্রেড লাইসেন্স ফি অবিশ্বাস্য হারে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এতে করে পড়েছেন চরম বিপাকে। ট্রেড লাইসেন্স ফি তাহলে কতোটা বেড়েছে? দ্বিগুণ, তিনগুণ চারগুণ এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৩ গুণ! এই অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক যুক্তিবোধ ও কাণ্ডজ্ঞানের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
 
রাজধানীর এক ক্ষুদ্র মুদি দোকানি গতবার লাইসেন্স নবায়ন করিয়েছিলেন ৯০০ টাকায়। এবার তার কাছে চাওয়া হচ্ছে ১১ হাজার টাকারও বেশি।
 
এই অবিশ্বাস্য হারের পাশাপাশি আরোপ করা হয়েছে বর্ধিত কর ও ভ্যাট। এখানেই শেষ নয়। তাদের বলা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের বকেয়া ভ্যাটও নাকি একই সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। তাও আবার বর্ধিত ফি অনুসারে। সঙ্গে যোগ হয়েছে লাইসেন্সপ্রতি ৫০০ টাকার উৎসে কর। ‘৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে ৩০ শতাংশ হারে সারচার্জ। ’ এ যেন গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো। আরো একটি গেঁড়াকলও যোগ করা হয়েছে। কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইচ্ছে করলেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতেও পারবেন না। যাবতীয় কর-ভ্যাট ও বর্ধিত ফি পরিশোধ করে তবেই তাকে তা করতে হবে। নইলে করপোরেশন তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেবে। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।  
 
গত ২ মার্চ বর্ধিত ফি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছিল এক তরফা ও আকস্মিক। এমন অবিশ্বাস্য ফি আরোপের আগে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত  করা হয়নি।
 
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই সিদ্ধান্ত যে অবিবেচনাপ্রসূত তা বলাই বাহুল্য। স্বল্প আয়ের, স্বল্প পুঁজির লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এখন তাই দু’চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে যে অরাজকতা ও সহিংসতা চলেছিল, এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী তার প্রত্যক্ষ শিকার। এদের একটা বড় অংশ ব্যবসার মন্দা ও অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে, কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে ধারদেনা করে টিকে আছেন। কেউবা ধকল কাটিয়ে যৎসামান্য পুঁজি যোগাড় করে মাথা তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আকস্মিক এই সিদ্ধান্তটি তাদের ঠেলে দিয়েছে মহাবিপাকে। সোজা বাংলায়, মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।  
 
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়াটা মোটেই যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত নয়। মনে রাখতে হবে অযৌক্তিক ফি, কর ও ভ্যাটের বোঝা সইবার ক্ষমতা এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর নেই। দীর্ঘদিনের নৈরাজ্যিক অবস্থার ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের বরং উচিত হবে এদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়ানো। ট্রেড লাইসেন্সের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার এবং যুক্তিসঙ্গত হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করার মধ্য দিয়েই তা করা যেতে পারে। সেটাই হবে মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আগে আগে আপাতত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসতে হবে সরকারকে। শুনতে হবে তাদের কথা।
 
জগতে কোনো সিদ্ধান্তই অপরিবর্তনীয় নয়, নির্ভুল নয়। বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার ইতিবাচক নজির সরকার অনেকবারই দেখিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেলায়ও তা দেখিয়ে সরকার সবার প্রশংসাও কুড়িয়েছে। এমন দরদী ও ইতিবাচক মনোভাব স্বল্প পুঁজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতিও দেখালে তা হবে আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
 
আশার কথা, ট্রেড লাইসেন্সের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আলোচনা চলছে। এই আলোচনা যেন ইতিবাচক ফল বয়ে আনে, এ মুহূর্তে এটাই প্রত্যাশা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।